দিল্লি : সেমিফাইনালে গেরুয়া ঝড়। রবিবার চার রাজ্যের ভোটের ফলপ্রকাশের পর দেখা গেল হাতে থাকা দু’টি রাজ্য হারাল কংগ্রেস। এক রাজস্থান এবং দুই ছত্তীসগঢ়। বিপুল ভাবে হিন্দিবলয়ের দু’টি রাজ্যেই ক্ষমতা দখল করেছে গেরুয়া শিবির। মধ্যপ্রদেশে যে প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার অঙ্ক কষে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটে গিয়েছিল কংগ্রেস, সেখানেও তাদের বড়সড় ধাক্কা খেতে হয়েছে। ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে ২৩০ আসনের মধ্যপ্রদেশে ১১৬টি আসন পেয়ে ক্ষমতায় ফিরেছে পদ্মফুল। কংগ্রেসের ‘সান্ত্বনা পুরস্কার’ কেবল তেলঙ্গানা। দক্ষিণ ভারতে ২০১৪ সালে নতুন রাজ্য তৈরি হওয়ার পর এই প্রথম সেখানে সরকার গড়বে কংগ্রেস। যেহেতু আগামী চার-পাঁচ মাসের মধ্যেই লোকসভা ভোট হবে, তাই এই পাঁচ রাজ্যের ভোটকে সেমিফাইনাল হিসেবে দেখছিলেন রাজনৈতিক মহলের অনেকে। সে দিক থেকে লোকসভার লড়াইয়ে তিন রাজ্যে বিজেপির জয় গেরুয়া শিবিরকে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে বলেই মত অনেকের।
যদিও ভোটে জয়ের পর দিল্লিতে বিজেপির সদর দফতরের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছেন, ‘‘ভারতের মানুষ স্থায়ী সরকার চান। ভারতের কোনও নাগরিক আমাদের উন্নয়নযাত্রায় পিছিয়ে পড়বেন না। সবার জন্য সরকার। সবার জন্য উন্নয়ন। কেউ কেউ বলছেন, আজকের এই জয়ের হ্যাটট্রিক হল ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের জয়ের গ্যারান্টি। মোদীর গ্যারান্টি দেওয়া গাড়ি সবার দ্বারে দ্বারে আসছে।’’
মধ্যপ্রদেশ
মধ্যপ্রদেশের ভোটে এ বার মহিলাদের সমর্থন ঢেলে বিজেপির দিকে গিয়েছে বলে মত রাজনৈতিক মহলের অনেকের। যা গেরুয়া শিবিরকে বাড়তি সুবিধা দিয়েছে।
রাজস্থান
মরুরাজ্যের রেওয়াজ পাঁচ বছর অন্তর সরকার বদল। তা থেকে এ বার বিচ্যুত হল না রাজস্থান। ১১৫টি আসন জিতে কংগ্রেস সরকারকে মাঠের বাইরে পাঠিয়ে দিয়েছে গেরুয়া শিবির। কিন্তু কুর্সির দখল পাকা হতেই আলোচনা শুরু হয়েছে কুর্সির ‘দাবিদার’ নিয়ে। কে হবেন বিজেপি-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী? দাবিদারের দীর্ঘ তালিকার সামনে ধন্দে পড়েছেন রাজনৈতিক নজরদারেরাও। বসুন্ধরা রাজে, দিয়া কুমারী, যোগী বালকনাথের পাশাপাশি রাজপুত নেতা গজেন্দ্র সিংহ শেখাবত, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘাওয়াল, রাজস্থান বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি সতীশ পুনিয়া, বিজেপি সাংসদ সিপি যোশী এবং অলিম্পিক্স পদকজয়ী বিজেপির লোকসভা সাংসদ রাজ্যবর্ধন রাঠৌড়দের নাম নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে
ছত্তীসগঢ়
২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে দেড় দশকের বিজেপি শাসনের ইতি ঘটিয়ে প্রথম বার বিধানসভা ভোটে জিতে ছত্তীসগঢ়ে ক্ষমতা দখল করেছিল কংগ্রেস। রাজ্যের ৯০টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ৬৮টি জিতেছিল তারা। বিজেপি মাত্র ১৫টি। তবে গত পাঁচ বছর ধরে নিষ্ক্রিয় রাজ্যনেতারা নন, রায়পুরের কুর্সিতে ফিরতে এ বার ‘মোদীত্বেই’ ভর করেছিল বিজেপি। ভোটের ফল বলছে, সেই রণকৌশলে সফল হয়েছে গেরুয়া শিবির। এ বার কংগ্রেস নেমে এসেছে ৩৫-এ। বিজেপি জিতেছে ৫৪টি আসন।
তেলঙ্গানা
হিন্দি ভারতে কংগ্রেস ধাক্কা খেলেও তারা প্রথম বার ক্ষমতার স্বাদ পেতে চলেছে দক্ষিণের তেলঙ্গনায়। ১১৯ আসনের তেলঙ্গানা বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার জাদুসংখ্যা ৬০। কংগ্রেস ৬৫টি আসনে জিতে নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা পেয়েছে। কেসিআরের বিআরএস (ভারত রাষ্ট্র সমিতি। আগে নাম ছিল টিআরএস বা তেলঙ্গনা রাষ্ট্র সমিতি) পেয়েছে ৩৯টি। তেলঙ্গানায় গত বিধানসভা নির্বাচনের পর তেড়েফুঁড়ে উঠলেও বিজেপি জিতেছে ৮টি আসন। আসাদউদ্দিন ওয়েইসির দল ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন’ (মিম) যে ৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল তার মধ্যে ৭টিতে জিতেছে। কর্নাটকের পর দক্ষিণের আরও একটি রাজ্যে ক্ষমতা দখল করল কংগ্রেস। যা বিপর্যের মধ্যেও হাত শিবিরের কাছে ‘আশার প্রদীপ’ হতে পারে বলে মত অনেকের।
বিজেপি
তিন রাজ্যে জয়ের পরেই সন্ধ্যায় দিল্লির বিজেপি সদর দফতরে গিয়ে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কংগ্রেসের উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দেশের সেবা করার জন্য রাষ্ট্রসেবা করতে হয়। অহংকার, নিরাশা, নেতিবাচক হেডলাইন দেয় সংবাদমাধ্যমকে। জনতার মনে স্থান দেয় না। নতুন কোনও প্রকল্প হলে, গরিবের জন্য বাড়ি তৈরি করলে কংগ্রেস এবং তার সঙ্গীরা ব্যঙ্গ করে। আপনারা শুধরে যান। জনতা না হলে আপনাদের বেছে বেছে সাফ করে দেবে।’’ বিজেপি কর্মীদের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘আজ উন্নয়নের জন্য বসে থাকা মানুষজন জানেন, তাঁদের আশা এবং আকাঙ্খা কেবল বিজেপিই পূরণ করতে পারে। আর বিজেপির কর্মকর্তাদের আজ ভূরি ভূরি প্রশংসা করব। আপনাদের কষ্টের ফল আজ আমরা পাচ্ছি। আমাদের সভাপতি নড্ডাজির রণনীতির জন্য এই জয়ের ভাগীদার তিনি। তাঁরও প্রশংসা প্রাপ্য।’’ তেলঙ্গনায় বিজেপি হারলেও সেখানেও যে দলের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে তা-ও উল্লেখ করেন তিনি।
কংগ্রেস
ভোটের এই ফলে পরাজয় স্বীকার করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তাঁর কথায়, ‘‘জনতার রায়কে বিনয়ের সঙ্গে আমরা স্বীকার করছি। তবে চিন্তাধারার লড়াই জারি থাকবে।’’ রবিবার ছত্তীসগঢ়, রাজস্থান, এবং মধ্যপ্রদেশে পরাজিত হয়েছে কংগ্রেস। ছত্তীসগঢ় ও রাজস্থানে তারা গদিচ্যুত হয়েছে। ওই দুই রাজ্যে ক্ষমতা দখল করেছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেসের জন্য যা বড় ধাক্কার। অন্তত ভূপেশ বঘেলের রাজ্যে এত খারাপ ফল হবে আশা করেননি অনেক কংগ্রেস নেতাও। রবিবার বিকেলে ‘এক্স হ্যান্ডলে’ রাহুল লেখেন, ‘‘মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় এবং রাজস্থানে জনতার রায়কে বিনয়ের সঙ্গে মেনে নিচ্ছি। তেলঙ্গানার মানুষকে আমার অনেক ধন্যবাদ। আমরা অবশ্যই উজ্জ্বল তেলঙ্গানা গড়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ করব। সমস্ত কর্মীর পরিশ্রম এবং সমর্থনের জন্য মন থেকে শুভেচ্ছা জানাই।