আগরতলা : তিথি অনুযায়ী শনিবার বিজয়া দশমী। আর এই দশমীর দিনে মণ্ডপে মণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতে উঠলেন মহিলারা। পরিবার ো স্বামীর মঙ্গলকামনা করেন তারা।প্রতি বছর শারদোৎসবের সময় পূজিত হন দেবী দুর্গা। মা দুর্গার মূর্তি অস্ত্র-সজ্জায় সজ্জিত শক্তিরূপী নারী। একদিকে শ্রীবৃদ্ধিকারী মা লক্ষ্মীর মূর্তি। আর অপরদিকে সৃজনশীলতা আর জ্ঞানবৃদ্ধির প্রতীক দেবী সরস্বতী। তিন নারীমূর্তির সুদৃঢ় উপস্থিতিতে নারীর ক্ষমতায়নের ও মাতৃত্বের ধারক-ও-বাহক এই মা দুর্গাই। যা প্রতিটি নারীরূপকে প্রতি মুহূর্তে তার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। সমাজে নারীরা আর কেবলই ‘অপর’ বা ‘প্রান্তিক, দলিত মানুষ’ না। যুগযুগ ধরে চলে আসা সমাজের বিভিন্ন ‘স্টিরিওটাইপ’ ও ‘ট্যাবু’ ভাঙার সময় বোধহয় এসেছে। তাই তো দশমীর পুণ্যলগ্নে অবলীলাক্রমে সকল শ্রেণির নারীরা, দুর্গারূপীরা, মেতে উঠতে পারেন সিঁদুর-খেলায়। আজকের মেয়েরা পেরেছে নানা ক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের বেড়াজাল আর নিয়মের রক্তচক্ষু ভেঙে বেরিয়ে আসতে–‘নারীত্ব’ নামক শৃঙ্খলকে টুকরো করে মুক্ত মনে ভাবতে। উত্তর-আধুনিক সমাজে ইঙ্গিতবহতার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই পালটে গিয়েছে সিঁদুরের ব্যবহার, বা এর অর্থ। উত্তর-নারীবাদীরা মাঝে-মাঝে বলেন বটে যে সিঁদুর নারীর দাসত্বের প্রতীক। অথচ এটি তো এভাবেও দেখা যেতে পারে, যে সিঁদুরকে সাধারণত নারীর দুর্বলতার অংশ হিসেবেই দেখা হয়, সেটা নারীর এক বিশেষ শক্তি। নারীশক্তি, নারীমুক্তির-প্রতীক মা দূর্গাকে সাক্ষী রেখে অবলীলাক্রমে, সদর্পে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন মেয়েরা। চারিদিক ঢাকা পড়ে সিন্দুরের রক্তিম আভায়। যুগ-পরিবর্তনে বর্তমানে সিঁদুরখেলা কেবল স্বামীর-মঙ্গল কামনার অঙ্গ নয়, নারীর ক্ষমতায়নের এক নিদর্শনও বটে। ভাবি প্রজন্মকে সঠিক ভাবে শিক্ষিত করা ও সেই শিক্ষাকে সমাজের কল্যাণে বা গঠনমূলক কাজে যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করাই যেন শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হয়। যে হাত মাতৃরূপী, শক্তিময়ী, চিন্ময়ী মা দুর্গার পূজা করে, সেই হাতই যেন সর্বদা ঘরের দুর্গার বা লক্ষ্মীর সুরক্ষায় রত থাকে, এটাই কাম্য। বুধবার বিজয়া দশমীতে বিভিন্ন পূজা মণ্ডপ ও বারোয়ারী পূজা গুলিতে দশমীর পূজা শেষে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন মহিলারা। মূলত তারা স্বামী সহ পরিবারের সকলের মঙ্গল কামনা করে সিদুর খেলায় মেতে উঠেন।