কলা, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের প্রচার ও প্রসারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রাজ্য সরকার: মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা : বর্তমান রাজ্য সরকার কলা, সংস্কৃতি এবং সাহিত্যের প্রচার ও প্রসারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই লক্ষ্যে সরকার একাধিক কর্মসূচি গ্রহণ করে এগিয়ে চলছে। জাতি জনজাতি অংশের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য পরিলক্ষিত হয় আমাদের ত্রিপুরায়।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে আয়োজিত ৩ দিন ব্যাপী ত্রিপুরা লিটারেচার ফেস্টিভ্যালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। উড়ান সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত এই উৎসব চলবে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, তিনদিনের এই উৎসবে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বগণ এখানে মূল্যবান আলোচনা করবেন। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে আগেও এখানে বেশকিছু সাহিত্য উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আজকের এই উৎসবে অংশগ্রহণ আমার জন্য খুবই সৌভাগ্যের বিষয়। দেশ বিদেশের বহু খ্যাতনামা দিকপাল, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিল্পী, কবি সাহিত্যিকগণ এখানে সমবেত হয়েছেন। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে যেসমস্ত বিদ্বজ্জনেরা এখানে উপস্থিত হয়েছেন আমি তাদের সকলকে আমার ব্যক্তিগত ও সরকারের তরফ থেকে হার্দিক অভিনন্দন, শুভেচ্ছা ও স্বাগত জানাই।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এখন আমরা যেখানে আছি সেটা কালজয়ী সুরকার গীতিকার সঙ্গীতজ্ঞ কুমার শচীন দেববর্মণ এই জায়গা দান করেছিলেন। যার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে আজকের এই রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবন। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের রাজ্যে একাধিকবার এসেছিলেন। ত্রিপুরাকে নিয়ে উনার কলম থেকে অনেক সৃষ্টি বেরিয়েছে। আমরা সবাই জানি আজ ২১শে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এটা আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় সব জায়গায় উদযাপিত হচ্ছে। ১৯৫২ সালের আজকের দিনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে মাতৃভাষাকে রক্ষা করার জন্য নিজেদের জীবনকে যারা উৎসর্গ করেছিলেন আজ তাদের স্মরণ করার দিন। শুধু ভারতে নয়, সারা বিশ্বেই এই দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করা হয়। যারা মাতৃভাষাকে রক্ষা করার জন্য আত্মত্যাগ করেছেন আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। আপনারা সবাই জানেন যে ত্রিপুরার রাজ পরিবারের সঙ্গে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের একটা নিবিড় সম্পর্ক ছিল। বিশেষ করে সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে। যা খুবই উল্লেখযোগ্য। ত্রিপুরার রাজ পরিবারের কাহিনী নিয়ে রবি ঠাকুরের যে উপন্যাস, নাটক সেটা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম সেরা সম্পদ। এছাড়াও এই শহরে এসে তিনি বেশ কয়েকটি গান রচনা করে গেছেন। আর এই শহরে রবি ঠাকুর ছাড়াও ঔপন্যাসিক বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ অন্যান্য গুণী লেখক সাহিত্যিকের পদধূলি পড়েছে। ত্রিপুরার রাজ পরিবারের রাজাগণ শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির বড় পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। বহু কৃতি গুণী শিল্পী সাহিত্যিক ত্রিপুরার রাজ দরবারে এসেছিলেন। ত্রিপুরার রাজারা যেমন একাধারে রাজকর্ম চালিয়েছিলেন, তেমনি নিজেরাও শিল্প ও সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেছেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মহারাজা বীরচন্দ্র মানিক্য থেকে শুরু করে মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বাহাদুরের সময়কালে ত্রিপুরার রাজ দরবারে দেশ বিদেশের বহু খ্যাতনামা কবি শিল্পী লেখক সাহিত্যিকগণ এসেছিলেন। বহু কবি শিল্পীকেও আর্থিকভাবে রাজ পরিবার থেকে সাহায্য করা হয়েছিল। এখানে ১৯টি জনজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। আর তাদের নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতি ভাষা ঐতিহ্য রয়েছে। ১৯টি জনজাতি সম্প্রদায়ের পাশাপাশি মণিপুরী, বাংলা ভাষাভাষীর মানুষও রয়েছেন এখানে। এর মাধ্যমে ইউনিটি ইন ডাইভারসিটি অর্থাৎ বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য পরিলক্ষিত হয় আমাদের ত্রিপুরায়। এখানকার প্রকৃতি, জল, হাওয়া, পরিবেশ, মানুষের জীবনযাত্রার রীতিনীতি, পাহাড় ও সমতলের একটা নিবিড় মেলবন্ধন রয়েছে। সংস্কৃতির বহুরূপতা সাহিত্যের নানা ক্ষেত্র বিদ্যমান রয়েছে ত্রিপুরায়। বাঙালি, জনজাতি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের এক একটি উজ্জ্বল সংস্কৃতি আমাদের গৌরবময় ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমি আশা করি ত্রিপুরার কৃষ্টি সংস্কৃতি আরো বিকশিত হবে।

অনুষ্ঠানে ডাঃ সাহা আরো বলেন, প্রতি বছর আমরা এখানে আগরতলা বইমেলার আয়োজন করি। সেখানে লেখক পাঠক প্রকাশক এবং সমাজের শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের মধ্যেকার সম্পর্ক আমরা দেখতে পাই। আগরতলা ছাড়াও অন্যান্য মহকুমাতেও এধরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও অটল কবিতা উৎসবে আমাদের কবি সাহিত্যিকদের সৃষ্টির সম্ভার উপস্থাপনের সুযোগ রয়েছে। সরকারি উদ্যোগে রাজ্য স্তরে নাট্য উৎসবের আয়োজন করা হয়। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে আমরা একটা সাংস্কৃতিক ক্যালেন্ডার করেছি। সেই ক্যালেন্ডার অনুযায়ী প্রতি বছরই সাংস্কৃতিক কর্মসূচি করা হয়ে থাকে। বেসরকারি উদ্যোগেও সেমিনার, আলোচনা সভা, কবি সম্মেলন, মনিষীদের জন্মদিন উদযাপন ও মেলা উৎসবের আয়োজন করা হয়। ত্রিপুরার সংস্কৃতিকে আরো সমৃদ্ধ করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে বর্তমান সরকার। খেলাধূলার ক্ষেত্রেও এগিয়ে যাচ্ছে ত্রিপুরা।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, দেশের প্রথম মহাকাশচারী বিজ্ঞানী রাকেশ শর্মা, পদ্মশ্রী ড. অরুণোদয় সাহা, স্বনামধন্য চিকিৎসক ডাঃ রবি কান্নান, পদ্মশ্রী গকুল চন্দ্র দাস, বুকার পুরস্কার বিজয়ী গীতাঞ্জলি শ্রী, রবীন্দ্র পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্যিক বিকচ চৌধুরী সহ আরো অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিত্ব। এছাড়াও দেশ ও বিদেশ থেকে কবি-সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীরা এই উৎসবে যোগদান করেন।

Related posts

Govt committed to promote art, culture, literature: CM

পাট্টা প্রাপক কৃষকরাও প্রধানমন্ত্রী কৃষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন—কৃষিমন্ত্রী

ব্যাঙ্ক শিল্পের ধর্মঘটের সমর্থনে আগরতলা তিন জায়গায় পৃথক পৃথক বিক্ষোভ কর্মসূচী