স্পেশাল এক্সিকিউটিভদের ট্যুরিস্ট পুলিশ হিসাবে মোতায়েনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার: মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা : পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে সরকার। পর্যটকদের নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়োগের চিন্তাভাবনা করছে রাজ্য সরকার। স্পেশাল এক্সিকিউটিভদের সেই কাজে ব্যবহার করার চিন্তাভাবনা রয়েছে। এর পাশাপাশি রাজ্যে একটি ১০০ শয্যা বিশিষ্ট চক্ষু হাসপাতাল নির্মাণের জন্য জমি চিহ্নিত করা হয়েছে।

 

আজ গোমতী জেলার অধীন অমরপুর মহকুমায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এদিন প্রথমে ছবিমুড়া, ফটিক সাগর ও অমর সাগরের পর্যটন পরিকাঠামো উন্নয়নের শিলান্যাস করেন তিনি। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক (এডিবি) এর মাধ্যমে এই প্রকল্পগুলির কাজ রূপায়ণ করা হবে। এরআগে অমরপুরের থাকছড়া গ্রাম পঞ্চায়েত নতুন অফিস ভবনের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ত্রিপুরার পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সবাই মিলে প্রচার ও প্রসার করতে হবে। দেশ ও বিশ্বের দরবারে ত্রিপুরার পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনাকে তুলে ধরতে হবে। পর্যটন শিল্পে ত্রিপুরা রাজ্যে অমূল্য রত্ন ভান্ডার রয়েছে। রাজ্যে পর্যটন একটা সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র। গত অর্থ বছরে প্রায় ৫ লক্ষের মতো পর্যটক রাজ্যে এসেছেন। বিদেশী পর্যটকগণও প্রচুর সংখ্যায় এখানে আসছেন। মানুষ এখন ত্রিপুরাকে চিনতে পারছেন। উনকোটি, উজ্জয়ন্ত প্যালেস, রুদ্রসাগর ইত্যাদি পর্যটন কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করছে সরকার।

আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা খুবই শান্তিপ্রিয় একটি রাজ্য। এই বার্তাই মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কিছুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্গদর্শনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে দিল্লিতে এনএলএফটি ও এটিটিএফের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ত্রিপুরা এখন সন্ত্রাসবাদ মুক্ত একটা রাজ্য। রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় মানুষ অবশ্য এখানে আসবেন। কংগ্রেস কিংবা কমিউনিস্ট সরকারের জমানায় রাজ্যে পর্যটনের উন্নয়নে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয় নি। কারণ তারা চাইতেন মানুষ যাতে গরীব থাকে। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য হচ্ছে সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস। তিনি সকল অংশের মানুষের আত্মনির্ভরতার উপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ প্রায় ৬৭ কোটি টাকার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়েছে। আমি আশা করবো যাতে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়িত হয়। রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলির অধিকাংশ জনজাতি অধ্যুষিত এলাকায় রয়েছে। বিগত সরকার শুধু ভোট বাক্সের জন্য জনজাতিদের ব্যবহার করেছে। আর আমরা জনজাতিদের প্রকৃত উন্নয়নের জন্য কাজ করছি। মানুষ চায় নিরাপত্তা ও শান্তিতে থাকতে। রাজ্যে বর্তমানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছে। জিবি হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নয়ন হয়েছে। ৯টি সুপার স্পেশালিটি পরিষেবা চালু হয়েছে। কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট হচ্ছে। বেসরকারিভাবে আরো একটি মেডিকেল কলেজ হচ্ছে। প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে সিজা হাসপাতাল গড়ে উঠবে।

মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আজ গোমতী জেলার অধীন অমরপুরে তিনটি বিধানসভা এলাকার জন্য মোট ২১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করা হয়েছে। যদিও বিরোধীরা বলছেন যে কোনও উন্নয়ন হচ্ছে না। কিন্তু আমরা উন্নয়ন ছাড়া কথা বলি না। পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি আমরা জোলাইবাড়ি, মেলাঘর মোটরস্ট্যান্ড, শান্তিরবাজার, তেলিয়ামুড়ায় জেলা পরিবহন অফিস, খোয়াইয়ে ইন্টিগ্রেটেড পার্কিং কমপ্লেক্সের শিলান্যাস করেছি। ১ লা মার্চ আমরা ৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে এলেমকো অক্সিলিয়ারি প্রোডাকশন সেন্টারের শিলান্যাস করেছি। উনকোটি জেলায় ১৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছি। সেই সঙ্গে গত দুই মাসে সারা রাজ্যে আরও অনেক প্রকল্প করা হয়েছে।

ডাঃ সাহা বলেন, আমরা জেলা হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্যও কাজ করছি। জেলা হাসপাতালগুলিতে ট্রমা কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। আমাদের সরকার সামগ্রিক স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে। গত ৩৫ বছরে স্বাস্থ্য দপ্তরে এমন উন্নয়ন প্রত্যক্ষ করা যায় নি। আমরা জিবি হাসপাতালে আসন সংখ্যা বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছি। আমাদের সরকার রাজ্যে একটি মেডিকেল হাব স্থাপনের লক্ষ্যে কাজ করছে। এছাড়াও ১০০ শয্যা বিশিষ্ট একটি উন্নত মানের চক্ষু হাসপাতাল স্থাপনের জন্য রাজ্য সরকার জমি চিহ্নিত করেছে। যাতে রাজ্যের মানুষকে চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে না হয়।

 

এদিন এই কর্মসূচি গুলোতে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পর্যটন মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, পূর্ব ত্রিপুরা আসনের সাংসদ কৃতি দেববর্মা, গোমতী জেলার সভাধিপতি দেবল দেবরায়, বিধায়ক রঞ্জিত দাস, বিধায়ক পাঠান লাল জমাতিয়া, বিধায়ক সঞ্জয় মানিক ত্রিপুরা, এডিসির কার্যনির্বাহী সদস্যা ডলি রিয়াং, পর্যটন দপ্তরের সচিব ইউ কে চাকমা, গোমতী জেলার জেলাশাসক তড়িৎ কান্তি চাকমা, পর্যটন দপ্তরের অধিকর্তা প্রশান্ত বাদল নেগি, জেলা পুলিশ সুপার নমিত পাঠক সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকগণ।

Related posts

Govt plans to deploy Special Executives as tourist police: CM

রাজ্যের আট জেলায় হবে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশে মহড়া

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের এন ডি আর এফ ফান্ড থেকে ডি বি টির মাধ্যমে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়