আগরতলা : ভালো কাজের মধ্য দিয়েও রাজনীতি করা যায়। রাজনীতির জন্য রাজনীতি করার দরকার পড়ে না। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দেশে ১১ বছরের শাসনকাল আমাদের অমৃতকাল। প্রধানমন্ত্রীর কারণে সারা দেশে বিকাশ, বিশ্বাস ও পরিবর্তন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে রাজ্য সরকারও এখন উন্নয়ন, উদ্ভাবন ও উদ্বোধনের কথা বলে। প্রধানমন্ত্রী মোদির সময়ে দেশের প্রায় ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্য সীমা থেকে উপরে উঠে এসেছেন।
আজ আগরতলার কৃষ্ণনগরে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এনডিএ সরকারের ১১ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, দেশের প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণের আগে প্রায় ১৩ বছরের অধিক সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি গুজরাটকে একটি মডেল রাজ্য হিসেবে তৈরি করেছিলেন। এরপর ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করে দেশের উন্নয়নে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। তাঁর ১১ বছরের শাসনকালে দেশ ক্রমশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সারা ভারত তথা সারা পৃথিবীর মানুষ বুঝতে পারছেন – ‘মোদি জি হে তো সব মুমকিন হে’। তাই আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে এমন একজন প্রধানমন্ত্রী এরআগে কোনদিন দেখিনি। তিনি যা বলেন সেটাই করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদির ১১ বছরের শাসনকাল আমাদের অমৃতকাল। তিনি সেবা, সুশাসন ও গরীব কল্যাণে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিকাশের নতুন যাত্রা আমরা দেখতে পাচ্ছি। একটা নতুন দিশা তিনি আমাদের সামনে রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রীর মার্গদর্শনে ত্রিপুরা সহ বিজেপি ও এনডিএ শাসিত রাজ্যগুলি কাজ করে যাচ্ছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত আমাদের কাজ করতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর ‘বিকশিত ভারত, আত্মনির্ভর ভারত, সংকল্প থেকে সিদ্ধি’ – এসব শুধু কথা নয়, এগুলি একটা কার্যক্রম হিসেবে দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শুধু কাজ নয়, একটা ভিত (ফাউন্ডেশন) তৈরি করতে পেরেছেন। আগামী প্রজন্মের জন্য কাজের মাধ্যমে একটা শক্তিশালী ভিত প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। আজ প্রধানমন্ত্রীর কারণে আমাদের সীমা সুরক্ষিত রয়েছে। তিনি দেশের অর্থ ব্যবস্থা, প্রযুক্তির ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করেছেন। এআই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স) ক্ষেত্রে আমাদের মার্গদর্শন করাচ্ছেন। কৃষি, স্বাস্থ্য সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ৫ জির সহায়তায় এআই’কে উন্নয়নের ব্যবস্থা করা হচ্ছে
সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, কিছুদিন আগে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে উত্তর পূর্ব ইনভেস্টর সামিট অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী মোদি বলছেন যতক্ষণ উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নত হবে না ততক্ষণ ভারতও উন্নত হবে না। আগে সন্ত্রাসবাদের কারণে মানুষ ভয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলে আসতো না। তাই প্রধানমন্ত্রী সিকিমকে নিয়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলকে অষ্টলক্ষী নাম দিয়েছেন এবং এই অঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ নজর দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এই অঞ্চলে শান্তি সুস্থিতি ফেরাতে প্রায় ১১/১২টি চুক্তি সম্পাদিত হয়। এতে বিপথগামী অংশের মানুষ মূলস্রোতে ফিরে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বের জন্য হিরা মডেল দিয়েছেন। এতে জাতীয় সড়ক, ইন্টারনেট, রেলওয়ে এবং এয়ারওয়ের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। আজ ত্রিপুরা সহ উত্তর পূর্বাঞ্চলে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। প্রধানমন্ত্রী সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা প্রয়াস, সবকা বিশ্বাস নীতি নিয়ে মানুষের কল্যাণে কাজ করছেন। আজ ফিল গুড এর আবহ তৈরি হয়েছে। আমাদের মোদি সরকার প্রকৃত অর্থে রেসপনসিবল, একাউন্টেবিলিটি, রিফর্ম, ট্রান্সফরমেশন ও পাবলিক পার্টিসিপেশন এর সরকার। মানুষের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনের জন্য প্রতি মাসের শেষ রবিবার মন কি বাত কার্যক্রম করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সাধারণ মানুষের চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর প্রদর্শিত দিশায় রাজ্য সরকারও একইভাবে একই কায়দায় রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা চালু করেছে। ডাঃ সাহা বলেন, আগে আমাদের অন্য দেশের উপর নির্ভরশীল থাকতে হতো। আমাদের বিভিন্ন দ্রব্য আমদানি করতে হতো। আর এখন আমরা অন্য দেশে রপ্তানি করছি। প্রধানমন্ত্রী মেক ইন ইন্ডিয়া এর উপর জোর দিয়েছেন। আইএমএফ এর তথ্যে অর্থনীতির দিক থেকে ভারতবর্ষ এখন চতুর্থ স্থানে চলে এসেছে। যেটা আগে ছিল ১১তম স্থানে। আজ প্রধানমন্ত্রীর কারণে দুর্নীতি, কেলেঙ্কারি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পেরেছি। সুশাসনের আলো এখন সারা দেশে পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের মহান সংস্কৃতিকে পুনরুজ্জীবিত করছেন প্রধানমন্ত্রী। কাশী বিশ্বনাথ করিডোর নির্মাণ, রাম মন্দির নির্মাণ, মহাকালেশ্বর মন্দির, কেদারনাথ মন্দিরের উন্নয়ন করছেন তিনি। জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০, ৩৫ এ ধারা বিলোপ করেছেন। পহেলগাঁওতে ২৬ জন নিরীহ পর্যটককে নৃশংস হত্যার জবাব অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী তিন তালাক প্রথা বিলোপ করেছেন। জিএসটি বাস্তবায়ন করেছেন। মহিলাদের ক্ষমতায়নে গুরুত্ব দিয়ে তাদের জন্য ৩৩% সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সভাপতি তথা সাংসদ রাজীব ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক বিপিন দেববর্মা, দলের মুখ্য প্রবক্তা সুব্রত চক্রবর্তী, প্রদেশ মিডিয়া ইনচার্জ সুনীত সরকার।