কৈলাশহর : শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বর্তমান রাজ্য সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। এক্ষেত্রে কোন ধরণের আপোষ করা হবে না। এই সরকার শুধু মুখে বলে না। কাজের নিরিখে বাস্তবায়ন করায় সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য। কারণ কথার চাইতে কাজ করে দেখাই আসল। এই লক্ষ্য নিয়েই কাজ করছে বর্তমান সরকার।
শনিবার উনকোটি জেলার কৈলাশহরে রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের ৭৫ বর্ষে পদার্পন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, রাজ্য সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। যেসকল ছাত্রী মহাবিদ্যালয়ে (জেনারেল কলেজ) পড়াশুনা করছে তাদের সমস্ত ধরণের ফি মকুব করে দেওয়া হয়েছে। সেটা ইতিমধ্যে লাগু করে দেওয়া হয়েছে। এতে উচ্চশিক্ষার প্রতি ছাত্রীদের আগ্রহ অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও শ্লোগান তুলেছেন। সেটা শুধু শ্লোগানের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে কাজ করে দেখাচ্ছি আমরা। মেয়েদের সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমাদের অন্যতম লক্ষ্য। এজন্য চাকরিতে মহিলাদের ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণ করে দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মহিলাদের জন্য ৫০ শতাংশ স্টল বরাদ্দ করা হচ্ছে। তাদের জন্য পিঙ্ক টয়লেট করার ব্যবস্থা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই সরকার শিক্ষাকে অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র করে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। সাব্রুমে ধম্মদীপা ইন্টারন্যশনাল বুদ্ধিস্ট ইউনিভার্সিটি খুব সহসাই শুরু হতে চলেছে। বর্তমানে পরিকাঠামো স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। এই সংক্রান্ত বিল বিধানসভায়ও পাশ হয়েছে। টেকনো ইন্ডিয়া ইউনিভার্সিটি হচ্ছে রাজ্যে। আর্যভট্ট ইউনিভার্সিটি চালু করা হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে যাতে জাতীয় শিক্ষা নীতি চালু হয় তার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। আমাদের কাছে এমবিবি ইউনিভার্সিটি আর ত্রিপুরা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি রয়েছে। স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে মেডিকেল হাবের মতো উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে ত্রিপুরাতে একটি এডুকেশন হাব গড়ে তুলতে আগ্রহী এই সরকার। ত্রিপুরায় ডেন্টাল কলেজ গড়ে তোলা হয়েছে। যেটা কোনদিন ভাবা যায় নি। ডাবল ইঞ্জিন সরকারের সুফলে এটা সম্ভব হয়েছে। ডাঃ সাহা বলেন, আপনারা জেনে খুশি হবেন গতকালই বিডিএস এর প্রথম ব্যাচের ফলাফল বেরিয়েছে। সরকারি ডেন্টাল কলেজের প্রথম ব্যাচ ইতিহাস হয়ে থাকবে। সারা জীবন তাদের মনে রাখা হবে। আমরা চায় রাজ্যে আরো মেডিকেল কলেজ হোক, ডেন্টাল কলেজ হোক, এডুকেশন হাব হোক।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশে ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি (জাতীয় শিক্ষা নীতি) চালু করা সম্ভব হয়েছে। সেই দিশায় রাজ্যেও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে জাতীয় শিক্ষা নীতি লাগু হয়েছে। জাতীয় শিক্ষা নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে উপএকৃত হবে ছাত্র সমাজ। এই সরকার ‘লক্ষ্য’ নামে একটি প্রকল্প চালু করেছে। মূলত, রাজ্যের শিক্ষিত যুবরা যাতে আইএএস, আইপিএস ইত্যাদি সর্বভারতীয় প্রশাসনিক পদে চাকরির জন্য ইউপিএসসি পরীক্ষায় যাতে বসতে পারে সেজন্য এই প্রকল্প চালু করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ইউপিএসসি পরীক্ষায় প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ হলে তাদের ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। এপর্যন্ত ৯ জনকে এই প্রকল্পে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এর পাশাপাশি দিব্যাঙ্গ, দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর কোর্সে পাঠরতদের প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা এবং উচ্চশিক্ষার অধীনে যারা ডিপ্লোমা কোর্সে পড়াশুনা করছে তাদের জন্য প্রতি মাসে ৪ হাজার টাকা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ২৩ জন দিব্যাঙ্গ, দৃষ্টিহীন শিক্ষার্থী এই প্রকল্পের আওতায় এসেছে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী টিংকু রায়, বিধায়ক বীরজিত সিনহা, কলেজের শিক্ষক শিক্ষিকা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিগণ। রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়ের এই ঐতিহাসিক যাত্রাকে স্মরণীয় করে রাখতে একটি চিত্র প্রদর্শনী ও রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনী ও রক্তদান শিবির ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।