আগরতলা : সকলের জন্য পরিশ্রুত পানীয়জলের সুবন্দোবস্ত করতে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে রাজ্যের বর্তমান সরকার। গ্রামীণ ক্ষেত্রে জল জীবন মিশনের সফল বাস্তবায়নের পাশাপাশি নগর এলাকায় ১০০ শতাংশ বাড়িতে পানীয়জলের ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে সরকার।
শুক্রবার উদয়পুরের রাজর্ষি টাউন হলে আয়োজিত মুখ্যমন্ত্রী নগরোন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে রাজ্যের ১২টি শহরে পানীয়জল সরবরাহের আধুনিক ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের আর্থিক সহযোগিতায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একজন বিকাশপুরুষ। তিনি দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। তিনি সবসময় বলেন ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’। আর রাজ্য যদি শ্রেষ্ঠ না হয় তবে ভারতও শ্রেষ্ঠ হবে না। ত্রিপুরাও বিকাশের লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে। সে কারনে আমরাও বলছি ‘এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা’। বিগত সরকারের আমলে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণে তেমন কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। শুধু কেন্দ্রের বিরুদ্ধে দোষারোপ করে চলেছিল তারা। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজ্যের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। তিনি আমাদের হিরা মডেল দিয়েছেন। এতে অনেক সুযোগ সুবিধা মিলেছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ আমি খুবই আনন্দিত যে নগরোন্নয়ন দপ্তর এধরণের একটা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। রাজ্যে এখন আগরতলা পুর নিগম সহ ১৩টি পুর পরিষদ এবং ৬টি নগর পঞ্চায়েত রয়েছে। আর নগরকে উন্নত করতে রাস্তা, জল, ড্রেইন লাগবে। এসবের যথাযথ ব্যবস্থা না হলে কোনদিন উন্নয়ন সম্ভব নয়। সেই দিশায় কাজ করার জন্য বরাবরই কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার চেষ্টা করছে। পরিশ্রুত পানীয়জল এরমধ্যে অন্যতম একটি। এরজন্য প্রয়োজন অবশ্য আয়রন রিমুভ্যাল প্ল্যান্ট। বিভিন্ন বৈঠকে এবিষয়ে আমি গুরুত্ব তুলে ধরেছি।
মুখ্যমন্ত্রী নগর উন্নয়ন প্রকল্পের (MM-NUP) অন্তর্ভুক্ত রাজ্যের ১২টি শহরে পানীয় জলের আধুনিক ব্যবস্থা সম্প্রসারনে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সহযোগিতায় ৫৩০ কোটি টাকার আর্থিক সংস্থান রাখা হয়েছে। আর ৩ বছরের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। নগরোন্নয়ন দপ্তর যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটা যাতে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা যায় এরজন্য যথাযথ নজরদারি রাখতে হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর সহ জনপ্রতিনিধিদেরও সতর্ক থাকতে হবে।
এই প্রকল্পে উপকৃত হবেন প্রায় ৭৫ হাজার পরিবারের ৪ লক্ষ মানুষ। প্রত্যেক বাড়িতে পানীয়জলের সংযোগ দেওয়া হবে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে মোট ১৮ কিলোমিটার রাস্তা ও ৪৮ কিলোমিটার ড্রেইন নির্মাণ করা হবে। এতে যাতায়াত ও নিষ্কাশনি ব্যবস্থারও উন্নতি হবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আজকের এই প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাই। এর পাশাপাশি ধন্যবাদ জানাই কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককেও ধন্যবাদ জানাই এই সহযোগিতা প্রদান করার জন্য। ক্লাস্টারের ভিত্তিতে এই প্রকল্প রূপায়ণ করা হবে। একযোগে এই প্রকল্প রূপায়িত হবে খোয়াই, মোহনপুর, রাণীরবাজার, বিশ্রামগঞ্জ, মেলাঘর, উদয়পুর, অমরপুর, বিলোনীয়া, কুমারঘাট, ধর্মনগর, কৈলাশহর ও আমবাসা শহরে। এজন্য প্রায় ৩০৫ কিলোমিটার পাইপ লাইন করা হবে। সব জায়গা মিলে ২৫টির মতো ডিপ টিউবওয়েল বসানো হবে। ১৮টি আয়রন রিমুভ্যাল প্ল্যান্ট রাখা হবে। এছাড়া চারটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও ১৯টি ওভারহেড রিজার্ভার তৈরি করা হবে। মানুষের কল্যাণে যাতে কোন খামতি না থাকে সেই দিশায় কাজ করছে রাজ্য ও কেন্দ্রের ডাবল ইঞ্জিন সরকার।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী প্রণজিত সিংহ রায়, বিধায়ক অভিষেক দেবরায়, নগরোন্নয়ন দপ্তরের সচিব অভিষেক সিং, গোমতী জেলার জেলাশাসক তড়িৎ কান্তি চাকমা, নগরোন্নয়ন দপ্তরের অধিকর্তা রজত পন্থ, উদয়পুর পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন শীতল চন্দ্র মজুমদার সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। এর পাশাপাশি এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন ১১টি নগর পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধিগণ।