৪৩তম আগরতলা বইমেলায় শতরূপা প্রকাশনীর আটটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন

আগরতলা : সাহিত্য ও সংস্কৃতির অনন্য মিলনস্থল ৪৩তম আগরতলা বইমেলা ২০২৫-এর ২নং মুক্ত মঞ্চে আজ উদযাপিত হলো শতরূপা প্রকাশনীর আটটি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। এই মাহেন্দ্রক্ষণে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট অতিথি, নামী কবি-লেখক এবং সাহিত্যপ্রেমী দর্শকবৃন্দ। মঞ্চে ছিলেন শ্রী বিম্বিসার ভট্টাচার্য, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা ,ত্রিপুরা সরকার।

শ্রী সুব্রত চক্রবর্তী, স্টেট লেবেল কালচারেল এডভাইজার কমিটির ভাইস চেয়ার ম্যান ।

শ্রী ভুলন চন্দ্র সাহা, ডুকলী পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ার ম্যান ।

শ্রী মান্তু দেবনাথ, সমাজ সেবী ।

শ্রী অভিজিৎ ভট্টাচার্য, প্রিন্সিপাল , স্কুল অব সাইন্স ।

বি, কে, রায় ও অন্যান্য অথিতিবৃন্দ । সভাপতিত্ব করেন প্রাক্তন শিক্ষক ও সমাজ সেবী শ্রী সুকুমার রায় । সভাটি সঞ্চালনা করেন শিক্ষিকা ও কবি শ্রীমতি সংহিতা ভট্টাচার্য

এবং শিক্ষক শ্রী সুবীর ভট্টাচার্য যৌথভাবে ।

মঞ্চে অথিতিদের ফুলের তোরা ও উত্তরীয় পড়িয়ে বরণ করে নেওয়া হয় । সকল অথিতিদের শতরূপা প্রকাশনীর পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করেন অন্যতম কর্ণধার শ্রীমতি শিপ্রা দেব ।

স্বাগত ভাষণ দেন শতরূপা প্রকাশনীর কর্ণধার শ্রী সন্তোষ সরকার । তিনি তাঁর ভাষণে প্রথম অথিতি ও সকল দর্শকদের শতরূপা প্রকাশনীর পক্ষ থেকে স্বাগত ও আন্তরিক শুভেচ্ছা জানান ।অতিথিবৃন্দ, পাঠকসমাজ এবং সাহিত্যপ্রেমীরা,

আপনাদের সবাইকে শতরূপা প্রকাশনীর পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিবাদন। আজ যাদের বই প্রকাশিত হল তাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান , তিনি বলেন এই লেখক কবিদের পরিশ্রমের ফসলই আজকের অনুষ্ঠান করতে সক্ষম হয়েছে । এই বিশেষ দিনে, ৪৩তম আগরতলা বইমেলার মুক্তমঞ্চে আমাদের নতুন বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে আপনাদের উপস্থিতি আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের এবং অনুপ্রেরণার।

এর পর তিনি প্রকাশনীর কিছু ইতিহাস সবার সামনে তুলে ধরেন । 1992 তে শ্রী সরকারের একটি গণিতের বিখ্যাত বই “গণিতের মূলমন্ত্র ” রচনা করেন । পরবর্তী সময় প্রায় ২৬/২৭ বৎসর পূর্বে

শতরূপা প্রকাশনীর যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৯ সন থেকে। প্রকাশনীর কর্ণধার সন্তোষ সরকার একটি গণিতের জনপ্রিয় বই “গণিতের মূল মন্ত্র” দিয়ে প্রথম যাত্রা শুরু হয়। এই বই প্রথম প্রকাশীত হয় 1992তে তেলিয়ামুড়া থেকে , পরবর্তী সময় 1999 সনে বইটির দ্বিতীয় সংস্করণের সময়ে শ্রী সরকারের আত্মজা শতরূরার নামে “শতরূপা প্রকাশনী “র নামাকরণ করা হয় এবং তখন প্রোপাইটর ছিলেন প্রকাশনীর কর্ণধারের পিতা নারায়ণ সরকার , পরবর্তী সময় তাঁর মৃত্যুর পর প্রোপাইটর হন প্রকাশনীর কর্ণধারের দ্বিতীয় আত্মজা অপরূপা সরকার । আগরতলা বইমেলাতে প্রথম ছোট একটি স্টল দিয়ে যাত্রা শুরু করেন ২০০২ সালে শিশু উদ্যানে। স্টল নম্বর ছিল S-1 , প্রকাশনী বইয়ের সংখ্যা তখন ছিল চারটি যেমন সন্তোষ সরকার প্রণীত “গণিতের মূল মন্ত্র ১ম ও ২য় খন্ড”, “একটু প্রাণ খুলে হাসো” শিপ্রা দেবের, “সহজে Tense শিক্ষার নিয়মাবলী” এই কয়েকটি বই দিয়েই আগরতলা বই মেলাতে যাত্রা শুরু হয় ঘাত প্রতিঘাত ও বিভিন্ন প্রতিকুলতার মাধ্য দিয়ে গুটিগুটি পায়ে উন্নতির পথের দিকে এগিয়ে চলেছে তার নিজস্ব গতিতে । বিশেষত প্রথম যখন প্রকাশনী করা হয় তখন সেইটা মূলত Writter cum Publication ই ছিল , এর পর অনেক স্বনাম ধন্য জ্ঞানীগুণী লেখক লেখিকা কবি সাহিত্যিকরা উক্ত প্রকাশনীতে কলম ধরেছেন এঁদের মধ্যেই অনেকেই আজ প্রয়াত । আজও অনেক লেখক লেখিকা কবিরা প্রকাশনীতে লিখে চলেছেন , অদূর ভবিষ্যতে আরো অনেকের বই প্রকাশিত হবে বলে তিনি আশাবাদী । প্রকাশনী থেকে অসংখ্য বই প্রকাশিত হয় বিভিন্ন বিষয়ে , বিশেষ করে গণিত, বিজ্ঞান, সাহিত্য, গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, নাটক,কুইজ , ধাঁধা, হাস্যকৌতুক এছাড়া ছাত্রছাত্রীদের উপযুক্ত শিক্ষামূলক বই । এই প্রকাশনীর বই দেশে বিদেশে বিভিন্ন জায়গায় খুব উচ্চ প্রসংশিত হয়েছে ।

নতুন বইগুলোর মোড়ক উন্মোচন একত্রে করেন সকল অতিথি ও কবিরা, যা পুরো অনুষ্ঠানকে এক সৃজনশীল উৎসবে রূপান্তরিত করে। বইগুলোর মধ্যে রয়েছে কবিতা, গল্প, উপন্যাস, গণিত, নাটক এবং প্রবন্ধের সমৃদ্ধ সংগ্রহ, যা আধুনিক সাহিত্যের ভিন্নতর স্বাদ তুলে ধরবে। প্রতিটি বইই এক একটি চিন্তার মশাল, যা পাঠকের মনে আলোকিত নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

সুব্রত চক্রবর্তী মহোদয় তাঁর ভাষণে শতরূপা প্রকাশনীর ভূয়সী প্রশংসা করেন বলেন এই প্রকাশনী খুব মানের লেখা প্রকাশ করে থাকেন , আজ যে বইগুলো প্রকাশিত হল সবটি বই এর লেখা উন্নতমানের , ভাল কাগজ খুব সুন্দর বাইন্ডিং খুব উন্নত মানের । অভিজিত ভট্টাচার্য মহোদয় প্রকাশিত বইগুলো নিয়ে আলোচনা করেন ।

অনুষ্ঠানে অতিথিরা শতরূপা প্রকাশনীর সাহিত্যে অগ্রগামী ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন। বক্তারা বলেন, “নতুন প্রতিভা এবং সাহিত্যিক বৈচিত্র্য তুলে ধরার ক্ষেত্রে শতরূপা প্রকাশনী তার প্রতিশ্রুতিকে অটুট রেখেছে।” লেখক ও কবিরা তাঁদের সৃষ্টির নেপথ্য ভাবনা এবং সাহিত্যজীবনের অভিজ্ঞতা দর্শকদের সঙ্গে ভাগ করে নেন, যা উপস্থিত দর্শকদের মনকে গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়। যে বইগুলো প্রকাশিত হলো

জীবন নদীর বাঁকে বাঁকে( কাব্য গ্রন্থ) – কবি সংহিতা ভট্টাচার্য

অঙ্গীকার ( উপন্যাস )- লেখিকা পিয়ালী দাস

ভালোবাসার মানুষকে আঘাত দিও না প্রাণে( কাব্যগ্রন্থ)

– কবি সন্তোষ সরকার

কিছু কথা কিছু ভাবনা( কাব্যগ্রন্থ)- কবি উত্তম কুমার দত্ত

অনুভূত ( কাব্যগ্রন্থ)-কবি নারায়ণ চন্দ্র মিত্র

মনের কথা ( কাব্যগ্রন্থ )- কবি মৃণাল কান্তি পাল

এসো নাটক করি ( নাট্যগুচ্ছ) ( ২য় সংস্করণ) – লেখক স্বর্গীয় সমর ভূষণ চক্রবর্তী

সহজ বৈদিক গণিত( গণিতের বই )( ২য় সংস্করণ )- লেখক

সন্তোষ সরকার

 

বইমেলার প্রাণবন্ত পরিবেশ, সাহিত্যের প্রতি মানুষের আগ্রহ এবং নবীন-প্রবীণ সৃষ্টিশীল মনের সমাবেশে এ দিনটি সত্যিই স্মরণীয় হয়ে থাকবে। নতুন বইগুলো মেলার স্টল নং B-20 M-Block থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন পাঠকরা, যা তাদের পাঠাভ্যাসকে আরো সমৃদ্ধ করবে।

 

শতরূপা প্রকাশনীর এই উদ্যোগ আগরতলা বইমেলার সাহিত্যিক আবহকে নতুন মাত্রা প্রদান করেছে, যা পাঠক-লেখকের মেলবন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করবে।এর পর শতরূপা প্রকাশনীর পক্ষ থেকে প্রত্যেক কবি ও লেখককে লেখক সম্মাননা প্রদান করেন অন্যতম প্রকাশনীর কর্ণধার শ্রীমতি শিপ্রা দেব মহোদয়া । এই প্রকাশনীর প্রাক্তন স্বর্গীয় লেখক সমর ভূষণ চক্রর্বতীর পক্ষে তাঁর স্ত্রী মৌরিণা চক্রর্তী লেখক সম্মান গ্রহণ করেন । আর একজন স্বর্গীয় লেখক বীরেন্দ্র চন্দ্র ভৌমিকের পক্ষে তাঁ র আত্মজা শ্রীমতি স্বস্তীকা ভৌমিক লেখক সম্মাননা গ্রহণ করেন । পরিশেষে সভাপতি সুকুমার রায়ের ভাষণ দিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয় ।

Related posts

রাজধানীর নজরুল কলাক্ষেত্রে একদিবসিয় সম্মেলন এিপুরা এগ্রিকালচার গ্র্যাজুয়েট এসোসিয়েশনের

ত্রিপুরা ভেটেরিনারী ডক্টরস্ এসোসিয়েশনের সাধারণ সভায় উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী সুধাংশু দাস

বাল্য বিবাহ বন্ধ করার জন্য সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান মন্ত্রী টিঙ্কু রায়ের