আগরতলা : বর্তমান রাজ্য সরকারের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে ত্রিপুরায় একটি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য হাব গড়ে তোলা। যা সরকারের জন্য একটি অন্যতম অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। এর পাশাপাশি রাজ্যে একটি হোমিওপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার আগরতলা সরকারি ডেন্টাল কলেজ এবং আইজিএম হাসপাতালে থ্রিডি প্রিন্টিং সলিউশন সেন্টারের (পিএম-ডিভাইন স্কিমের অধীনে) উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। ন্যাশনাল ওরাল হেল্থ প্রোগ্রাম, ন্যাশনাল হেল্থ মিশন, ত্রিপুরার সহযোগিতায় এই প্রকল্প রূপায়ণ করা হয়।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ও প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজকের দিনটি খুবই আনন্দের দিন। আগরতলা সরকারি ডেন্টাল কলেজের টুপিতে আরেকটি পালক যুক্ত হলো। এই কলেজে থ্রিডি প্রিন্টিং সলিউশন সেন্টারের উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভিশন প্রতিফলিত হলো। এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। আমরা রাজ্যে একটি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য হাব গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। এজন্য আমি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেপি নাড্ডার সঙ্গে রাজ্যে হোমিওপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদিক মেডিকেল কলেজ স্থাপনের বিষয়ে কথা বলেছি। এই স্বপ্ন পূরণে আমাদের অবশ্যই চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি আমরা রাজ্যে একটি এইমস- বা রিমস – এর মতো হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি। রাজ্যের হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের মতো এমন একটি বিষয় যা আমরা কখনই ভাবিনি।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ডেন্টাল কলেজ আমাদের জন্য একটি স্বপ্নের প্রকল্প ছিল। আমরা এই প্রতিষ্ঠান খোলার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। বিগত সরকারের আমলেও আজ থেকে ১০ বছর আগে আমরা এমন একটি কলেজ স্থাপনের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু যখনই ভালো কিছু করার চেষ্টা করবেন সেখানে সবসময় নেতিবাচক কিছু মানসিকতার লোক এসে তাতে সমস্যা তৈরি করার চেষ্টা করবে। ডেন্টাল কলেজ চালু করার ক্ষেত্রেও আমরা নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছিলাম। বিজ্ঞান, বিশেষ করে দন্তচিকিৎসার ক্ষেত্র দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। এই ডেন্টাল কলেজের প্রথম ব্যাচ ভালো ফলাফল করে উত্তীর্ণ হলে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম। এতে মনও ভালো হয়ে যায়। আমাদের উঁচু মানের ফ্যাকাল্টি থাকায় ছাত্রছাত্রীরাও ভাল নম্বর অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা চাই আগরতলা সরকারি ডেন্টাল কলেজ দেশের একটি মডেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হোক। এই কলেজ সম্পর্কে সবার জানা উচিত। সেই সঙ্গে যুগের সঙ্গে টাল রেখে শিক্ষকদেরও সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করার গুরুত্ব রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও ঘোষণা করেন যে ত্রিপুরা হচ্ছে উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রথম রাজ্য যেখানে ডেন্টাল কলেজে একটি থ্রিডি প্রিন্টিং সলিউশন সেন্টার গড়ে উঠেছে। তিনি এটি আমাদের জন্য একটি বিশাল প্রাপ্তি। সার্জারি, বোন গ্রাফটিং ও রক্তপাতবিহীন অপারেশন সহ বিভিন্ন উন্নত প্রক্রিয়া সবই এখানে হচ্ছে। প্রতিদিন শতাধিক রোগী এই হাসপাতালে পরিষেবা নিতে আসেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ডেন্টাল কলেজের উদ্বোধন করেছেন এবং এর সুনাম বজায় রাখা আমাদের দায়িত্ব। প্রতি মাসে অন্তত তিন হাজারের বেশি রোগী এখানে আসেন। ডাঃ সাহা এই প্রতিষ্ঠানটির সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার গতি অব্যাহত থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি জানান, দ্বিতীয় ব্যাচে প্রায় ২০ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছে। এর পাশাপাশি এ আই ব্যবহারের মাধ্যমে এই থ্রিডি প্রিন্টিং সলিউশন সেন্টারটি ওপিডি’র চাপ কমাতে সাহায্য করবে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, ডোনার মন্ত্রকের অধিকর্তা (বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি) তানুং জামো, রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা প্রফেসর ডাঃ সঞ্জীব দেববর্মা, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ অঞ্জন দাস, মেডিকেল এডুকেশনের অধিকর্তা ডাঃ এইচপি শর্মা, স্বাস্থ্য দপ্তরের অতিরিক্ত সচিব রাজীব দত্ত, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের এমডি ডঃ সমিত রায় চৌধুরী, আগরতলা সরকারি ডেন্টাল কলেজের প্রিন্সিপাল ডাঃ শালু রাই সহ কলেজ হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসকগণ।