চাকরি প্রদান থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করছে রাজ্য সরকার: মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা : চাকরি প্রদান থেকে শুরু করে সব ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করছে রাজ্যের বর্তমান সরকার। এর পাশাপাশি মহিলাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার। কাজের নিরিখেই মানুষ আমাদের উপর আস্থা রাখছে।

শনিবার সিপাহীজলা জেলার বিশালগড়ের পূর্ব লক্ষ্মীবিলে ALIMCO (কৃত্রিম অঙ্গ প্রস্তুতকারক কর্পোরেশন) অক্সিলিয়ারি প্রোডাকশন ইউনিটের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও ভূমিপুজন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন এবং খাদ্য, গণবন্টন ও ভোক্তা বিষয়ক দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী বনওয়ারী লাল ভার্মা।

উল্লেখ্য, দিব্যাঙ্গজন ব্যক্তিদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিমন্ডলে আরো সশক্ত করতে যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের স্বপ্নকে সাকার করার লক্ষ্য নিয়ে প্রথমবার ত্রিপুরায় গড়ে উঠতে চলেছে এই ধরণের সেন্টার। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজ খুবই একটা আনন্দের দিন। আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাই যে তিনি যা বলেন সেটাই করে দেখান। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির উন্নয়নে অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি চালু করেছেন তিনি। ২০১৮ সালের আগে এখানে এসে তিনি হিরা মডেল দেওয়ার কথা বলেছিলেন। আর সেই হিরা মডেলের কারণে আমাদের রাজ্যে জাতীয় সড়ক থেকে শুরু করে ইন্টারনেট, রেলওয়ে, এয়ারওয়ের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের জন্য একটার পর একটা উন্নত পরিষেবা দিচ্ছেন। আজ এখানে এলিমকোর অক্সিলিয়ারি প্রোডাকশন ইউনিট হওয়ায় আমরা খুবই আনন্দিত। প্রায় ৫ একর জমিতে এই সেন্টার গড়ে তোলা হবে। এবিষয়টি আমাদের গোচরে আনা হলে আমরা খুব কম সময়ের মধ্যে জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে সব ব্যবস্থাপনা করে দিই।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বার বার বলেন যতক্ষণ পর্যন্ত উত্তর পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন হবে না ততক্ষণ দেশের উন্নয়ন হবে না। সেই দিশায় কাজ করছেন তিনি। আগে উত্তর পূর্বাঞ্চলে ৭টি রাজ্য ছিল। এখন সিকিম নিয়ে ৮টি রাজ্য হয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী এই ৮টি রাজ্যকে অষ্টলক্ষী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এই লক্ষ্মীবিলে এধরণের সেন্টার গড়ে উঠার মাধ্যমে যেন লক্ষী চলে এসেছে। এই সেন্টারের মাধ্যমে এই এলাকার অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। রাস্তাঘাটের উন্নয়নের পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রে বিকাশ হবে। আমরা চাই এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গড়ে উঠুক। উত্তর পূর্বাঞ্চলের মধ্যে এই প্রথমবার এধরণের কেন্দ্র গড়ে উঠছে। শুধু ত্রিপুরার দিব্যাঙ্গজন মানুষের জন্য সুবিধা হবে না, প্রবীণ মানুষদেরও সুবিধা হবে। এখান থেকে যেসমস্ত উপকরণ তৈরি হবে সেটা উত্তর পূর্বের অন্যান্য রাজ্যেও সরবরাহ হবে।

 

আলোচনায় অংশ নিয়ে ডাঃ সাহা আরো বলেন, কিছুদিন আগে আমি গুয়াহাটিতে একটি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করি। সেখানে বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্যোগপতিগণ যোগদান করেন। শুধু দেশ থেকে নয়, বিদেশ থেকেও এসেছিলেন। আমাদের ত্রিপুরা রাজ্য ছোট হলেও আমরা চেষ্টা করি স্বচ্ছতার মাধ্যমে কাজ করার। প্রধানমন্ত্রী বারবার বলছেন স্বচ্ছতা না থাকলে আমরা মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারবো না। চাকরি থেকে শুরু করে পোস্টিং সহ সব ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা বজায় রেখে কাজ করার চেষ্টা করছে এই সরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে আমাদের রাজ্যে চার হাজারের মতো স্বসহায়ক দল ছিল। আর আমাদের সরকার আসার পর এখন পর্যন্ত প্রায় ৫৬ হাজার স্বসহায়ক দল তৈরি হয়েছে। যেগুলিতে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মহিলা যুক্ত হয়েছেন। তাদের জন্য সরকার এবং ব্যাংক থেকে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। মহিলাদের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, সবকা প্রয়াস দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সবার কল্যাণে কাজ করছেন। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের সার্বিক বিকাশে ১৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। আমাদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর মতো একজন অভিভাবক রয়েছেন, যিনি পাশে থাকলে সবকিছু করা সম্ভব।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এবার দিল্লির ফলাফল কি হয়েছে সেটা সবাই প্রত্যক্ষ করেছেন। ৭০টি আসনের মধ্যে ভারতীয় জনতা পার্টি ৪৮টি আসনে জয়লাভ করেছে। এরআগেও তিনটি প্রদেশে বিজয় হাসিল হয়েছে। কাজের নিরিখেই মানুষ আমাদের উপর আস্থা রাখছে। ত্রিপুরার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো জায়গায় রয়েছে। দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নিচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। যেখানেই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকবে সেখানে মানুষ আসবে। এখন আমাদের রাজ্যে উদ্যোগপতিগন আসছেন। রাজ্যে শিল্প স্থাপন সংক্রান্ত বিষয়ে আমি টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যানের সঙ্গেও কথা বলেছি। আগামীতেও আমরা বিভিন্ন ধরনের সেন্টার রাজ্যে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এনিয়ে দিল্লির সঙ্গে প্রতিনিয়ত কথা বলা হচ্ছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্রীড়া সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়নে নিরন্তর প্রয়াস জারি রেখেছে রাজ্য সরকার। ত্রিপুরায় কিছুদিন আগে প্যারা গেমস অনুষ্ঠিত হয়। এর পাশাপাশি দিব্যাঙ্গজনদের ক্রীড়া সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎসাহ বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব, সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী টিংকু রায়, বিধায়ক সুশান্ত দেব, সিপাহীজলা জেলার সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, জেলাশাসক ড. সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল, এলিমকোর সিএমও প্রবীণ কুমার, জেলা পুলিশ সুপার নমিত পাঠক সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।

Related posts

সরকারি দপ্তরে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে পথে নামলো বাম যুবরা

মশার উৎপাত বন্ধের দাবিতে সোচ্চার সিপিএম

শ্রমিকদের সুরক্ষার উপরে জোর দেওয়া হয়েছে জাতীয় সুরক্ষা সপ্তাহে