শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও জনজাতিদের সার্বিক উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার: মুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা : শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও জনজাতিদের সার্বিক উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্দেশনায় রাজ্যে প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ আবাসন করা হয়েছে।

 

আজ সিপাহীজলা জেলার বিশালগড় মহকুমার অধীনে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।

বিশালগড় টাউন হলে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, আজ বিশালগড়ে ৭টি নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। এরআগে মধুপুর উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করেছি। এই ১৩টি প্রকল্পের জন্য মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৮ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা। গত ২০ জুন দক্ষিণ জেলার সাব্রুমে মোট ১৯টি প্রকল্পের উদ্বোধন করতে যাই। সেখানেও প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয় হবে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন উন্নয়ন ছাড়া কোন কথা হবে না। সর্বাঙ্গীণ উন্নয়নে গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি। আর আমরাও ডাবল ইঞ্জিনের সরকার সেই দিশায় কাজ করছি। বিরোধীদের কটূক্তির মধ্যেও কাজের মাধ্যমে আমরা উন্নয়নের প্রমাণ রাখছি। শুধু ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কয়েক মাসে আমি বিভিন্ন জায়গায় ৬৩৮ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার অধিক বিভিন্ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। উন্নয়নের শেষ নেই। কিভাবে দেশকে চালাতে হয় সেটা করে দেখাচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী।

মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের অগ্রাধিকারের বিষয় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ এবং জনজাতিদের সার্বিক উন্নয়ন। এর পাশাপাশি স্বনির্ভরতার উপরও বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের আগে রাজ্যে মাত্র চার থেকে সাড়ে চার হাজার স্বসহায়ক দল ছিল। সেই জায়গায় এখন প্রায় ৫৬,০০০ স্বসহায়ক দল হয়েছে। তাদেরকে ৭০০ কোটি টাকার অধিক রিভলভিং ফান্ড দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক থেকেও ফান্ড দেওয়া হচ্ছে। মহিলাদের ক্ষমতায়নে গুরুত্ব দিয়েছে সরকার। তাদের জন্য ৩৩% সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। রাজ্যের সমস্ত সাধারণ ডিগ্রি কলেজে ছাত্রীদের জন্য সকল রকম ফি মকুব করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় পিঙ্ক টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সরকারি স্টল বণ্টনে মহিলাদের জন্য ৫০% সংরক্ষণ রাখা হয়েছে। মহিলাদের নিরাপত্তার জন্য রাজ্যের আটটি জেলায় মহিলা পরিচালিত থানা স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে পশ্চিম জেলায় দুটি মহিলা থানা স্থাপন করা হয়েছে। ১৩৭ জন মহিলাকে টিএসআরে নিয়োগ করা হয়েছে। ত্রিপুরায় প্রায় ৯১ হাজার লাখপতি দিদি হয়েছেন।

বক্তব্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আগামীদিনে রাজ্যের সম্পদ ব্যবহার করে ত্রিপুরাকে আরো সমৃদ্ধশালী করতে হবে। সাক্ষরতার ক্ষেত্রে সম্প্রতি দেশের তৃতীয় রাজ্য হিসেবে পূর্ণতা লাভ করেছে ত্রিপুরা। সাক্ষরতার হার ৯৫.৬%। ত্রিপুরা এখন সবদিক দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে জিএসডিপি এবং মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। আমাদের রাজ্য আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থার দিক দিয়েও ভালো অবস্থানে রয়েছে। দেশের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে আইন শৃঙ্খলা ব্যবস্থায় নিচের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ত্রিপুরা। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব গ্রহণের পর দেশে গণতন্ত্র পুন:প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মুসলিম মা বোনেদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে তিন তালাক প্রথা বিলোপ করেছেন তিনি। এভাবে তিনি গণতন্ত্রকে রক্ষা করেছেন। জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ও ৩৫ এ ধারা বিলোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।

অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা জানান, প্রধানমন্ত্রী আবাসনের উপর জোর দিয়েছেন। এই লক্ষ্যে ত্রিপুরায় প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ আবাসন করা হয়েছে। পানীয়জলের জন্য প্রায় ৮৭% নল সে জল কর্মসূচি রূপায়ণ করা হয়েছে। উত্তর পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। আগে এই অঞ্চলে উগ্রবাদ কায়েম ছিল। সেই জায়গায় এখন উগ্রবাদীদের সঙ্গে প্রায় ১২টা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। সর্বশেষ চুক্তি হয়েছিল ত্রিপুরার এনএলএফটি ও এটিটিএফ এর সঙ্গে। এরমধ্য দিয়ে এখন ত্রিপুরাকে সন্ত্রাসবাদ মুক্ত রাজ্য বলা যায়। এখন রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর যেখানে শান্তি থাকবে সেখানেই উন্নয়ন সম্ভব। আগে খুন, সন্ত্রাস, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ আমরা দেখতে পেয়েছি। দুর্নীতি ছাড়াও যে সরকার চালানো যায় সেটা করে দেখাচ্ছে আমাদের ডাবল ইঞ্জিন সরকার।

 

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক সুশান্ত দেব, বিধায়ক অন্তরা সরকার দেব, সিপাহীজলা জিলা সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, বিশালগড় পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন অঞ্জন পুরকায়স্থ, জেলাশাসক ড. সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল, পুলিশ সুপার বিজয় দেববর্মা, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ তপন মজুমদার সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।

Related posts

কর্মচারীদের ট্রান্সফার পলিসির জন্য চিন্তাভাবনা করছে রাজ্য সরকার: মুখ্যমন্ত্রী

জনজাতি এলাকায় উন্নয়নই ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর মূলমন্ত্র: মন্ত্রী রতন লাল নাথ

৫৩ তম রাজ্যভিত্তিক ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতার সূচনা মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে