আগরতলা : ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস ত্রিপুরা রাজ্যের খুবই গর্বের। ত্রিপুরার জনগণ তাদের নিয়ে গর্ববোধ করেন। শুধু রাজ্যে নয়, সারা দেশেই টিএসআর বাহিনীর একটা সুনাম রয়েছে। বিশেষ করে রাজ্যে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ মোকাবিলায় টিএসআর বাহিনীর উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। নিরাপত্তা রক্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও সামাজিক কাজেও অনবদ্য ভূমিকা রেখেছেন টিএসআর জওয়ানরা।
শুক্রবার রাজধানী সংলগ্ন আরকে নগরের এ সি রামারাও ট্রেনিং সেন্টারে টিএসআরের ১৪ ও ১৫ নম্বর ব্যাটেলিয়নের পাসিং আউট প্যারেডে অংশ গ্রহণ করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, টিএসআরের ১৪ ও ১৫ নম্বর ব্যাটেলিয়নে মোট ১,৪১৩ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৩৭ জন মহিলা ও ১,২৭৬ জন পুরুষ রয়েছেন। রাজ্যের চারটি ট্রেনিং সেন্টারে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এগুলির মধ্যে রয়েছে – নরসিংগড়স্থিত কেটিডিএস পুলিশ ট্রেনিং একাডেমি, আরকে নগর ট্রেনিং সেন্টার, কচুছড়া কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি ট্রেনিং সেন্টার ও জম্পুইজলা টিএসআর সদর কার্যালয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নির্দেশিকা মেনে জওয়ানদের কঠোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ডা: সাহা বলেন, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ মোকাবিলায় ১৯৮৪ সালে টিএসআর বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনীর ধাঁচে এই বাহিনী গড়ে তোলা হয়। টিএসআর-এর মূল লক্ষ্য হল বীরতা এবং বন্ধুত্ব। এই লক্ষ্য নিয়েই তারা সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। তারপর ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে টিএসআর-এর দ্বিতীয় ব্যাটেলিয়ন গঠন করা হয়। বিএসএফের সাথে নিরাপত্তার দ্বিতীয় স্তর হিসেবে আন্তর্জাতিক সীমান্তে টিএসআর জওয়ানদের মোতায়েন করা হয়েছিল। আজ টিএসআর-এর ১৪তম ও ১৫তম ব্যাটেলিয়নের পাসিং আউট অনুষ্ঠিত হয়েছে। টিএসআর জওয়ানরা যেকোনো ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১১ সালে ত্রিপুরা পুলিশ ও টিএসআর বাহিনী প্রেসিডেন্টস কালার্স সম্মানে সম্মানিত হয়েছে। সারা দেশের মধ্যে চতুর্থ রাজ্য হিসেবে এই গৌরব অর্জন করেছে ত্রিপুরা। বর্তমানে টিএসআর এ দুটি ইন্ডিয়ান রিজার্ভ বাহিনী ছাড়াও আরো ১৪টি শক্তিশালী বাহিনী রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ মোকাবিলা ছাড়াও টিএসআর বাহিনী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, শিল্প এলাকার নিরাপত্তা এবং ভিআইপিদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। বর্তমানে নিরাপত্তার জন্য ওএনজিসিতে ১ ব্যাটেলিয়ন এবং ওটিপিসিতে ১ কোম্পানি টিএসআর মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া টিএনজিসিএল ও নিপকোতে টিএসআর জওয়ানরা নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দাবি অনুসারে দিল্লি পুলিশের সঙ্গে নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে টিএসআর বাহিনী। ছত্তিশগড়ের শিল্প এলাকায় নিরাপত্তা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করছে টিএসআর বাহিনী। নির্বাচনের সময় বিভিন্ন রাজ্যেও টিএসআর মোতায়েন করা হয়। এর পাশাপাশি টিএসআর বাহিনী পাঠানোর জন্য বিভিন্ন রাজ্য থেকেও অনুরোধ আসে।
রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জনসাধারণের কাছে প্রশাসনিক সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে টিএসআর। প্রয়োজনে সরকারের জনমুখী প্রকল্প সম্পর্কেও সাধারণ মানুষকে সচেতন করছে তারা। প্রত্যন্ত এলাকার যুবকদের পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীতে যোগদানের জন্য উৎসাহিত করছে টিএসআর। খেলোয়াড়দের উৎসাহ প্রদান ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নানা উদ্যোগ নিচ্ছে তারা। টিএসআর জওয়ানরা খেলাধুলায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে কৃতিত্ব অর্জন করছে। এজন্য তাদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আরো বলেন, গত দুই বছরে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে টিএসআর ও ত্রিপুরা পুলিশ। ইতিমধ্যে ২৪ জন সন্ত্রাসবাদী ও তাদের সহযোগী আত্মসমর্পণ করেছে। নিরাপত্তা রক্ষা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষার প্রশ্নে আগরতলা শহর এবং অন্যান্য শহর এলাকায় টিএসআর জওয়ানদের মোতায়েন করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই সঙ্গে আগরতলা, উদয়পুর, ধর্মনগর, আমবাসা, কুমারঘাট, বিলোনিয়াতে টিএসআর-এর জন্য আবাসন স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এদিন পাসিং আউট প্যারেডের অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ত্রিপুরা সরকারের মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন সহ আরক্ষা দপ্তরের উচ্চপদস্থ আধিকারিকগণ। অনুষ্ঠানে টিএসআর জওয়ানদের অভিবাদন গ্রহণ করেন মুখ্যমন্ত্রী।