আগরতলা : প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী প্রতিদিনই মানুষকে নতুন নতুন স্বপ্ন দেখান এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপায়িত করেন। প্রধানমন্ত্রী মানেই উন্নয়নের গ্যারান্টি, মানুষের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের গ্যারান্টি, সামাজিক উন্নয়নের গ্যারান্টি। আর রাজ্যে ‘প্রতি ঘরে কংগ্রেস’ বলে এখন নতুন অভিযান শুরু করেছে কংগ্রেস দল। তা ভারতীয় জনতা পার্টির কাছ থেকেই ধার নিয়েছে তাঁরা। ওরা মুখে বলে কিছু, কাজ করে আরেকটা। তাদের কাছে দুর্নীতি ছাড়া কিছু পাওয়া যায় না। দুর্নীতিই তাঁদের অন্যতম লক্ষ্য। মঙ্গলবার উত্তর ত্রিপুরা জেলার ধর্মনগরে ভারতীয় জনতা পার্টির উদ্যোগে আয়োজিত বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রা উপলক্ষে এক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৮ সালে জনতার রায়ে রাজ্যে বিজেপি – আইপিএফটি সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এরপর ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত, পুর পরিষদ ও নগর পঞ্চায়েত নির্বাচনে কিছু আসন বাদ দিয়ে প্রায় সবগুলিতেই বিজেপি জয়ী হয়েছে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে প্রথমবারের মতো ইতিহাস সৃষ্টি করে দুটি আসনেই জয়ী হন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থীরা। এদিনের সভায় বিগত বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস সিপিএমের আঁতাত নিয়েও তীব্র সমালোচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনেও ‘এসে পড়েছি’, ‘এসে পড়েছি’ বলে কত শ্লোগান দিয়েছে তাঁরা। ২৩ এর আগে ও পরের উপনির্বাচনেও জয়ী হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। তিনি বলেন বক্সনগরের মতো কমিউনিস্টদের আঁতুড় ঘরে ৩০ হাজারের অধিক ভোটে বিজেপি প্রার্থী জয়ী হয়ে তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত করেছেন। সম্প্রতি ৫ রাজ্যের নির্বাচনে ৩টি রাজ্যে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে ভারতীয় জনতা পার্টি। এরপরও তারা বলছে লোকসভাতে অন্যরকম হবে। মুখ্যমন্ত্রী কটাক্ষ করে বলেন ত্রিপুরাতেও অনেকের আশা ছিল কংগ্রেস চলে আসবে। কিন্তু মানুষ বুঝেছে তাদের যে আর বিশ্বাস করা যায় না। বিগত নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে কংগ্রেস সিপিএমের বি টিম হয়ে গেছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনে আমরা দেখেছি, কংগ্রেস পার্টি অফিস থেকে সিপিএমের ফ্ল্যাগ আর সিপিএম পার্টি অফিস থেকে কংগ্রেসের ফ্ল্যাগ বের হচ্ছে। তিনি বলেন উপরে গিয়ে কি জবাব দেবেন তারা ? যাদের হাতে খুন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ, রাজ্য ছাড়া হতে হয়েছে সেই রক্ত মাখা হাতে হাত মিলিয়েছে তারা। আর ভারতীয় জনতা পার্টির অভিভাবক হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। অথচ বিরোধীরা রাজনীতিতে আসেন শুধু করাপশন করার জন্য। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, কিছুদিন আগেও এক কংগ্রেস সাংসদের বাড়ি থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী ডা: সাহা বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে দেশ এখন উন্নয়নের দিশায় এগিয়ে চলছে। সারা বিশ্বে ভারতকে এখন অন্যতম শ্রেষ্ঠ দেশ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। সেটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বের কারণে। দেশে যেখানেই ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার রয়েছে সব জায়গাতেই স্বচ্ছতার সরকার চলছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুধু মানুষের সমস্যা নিরসনের চিন্তা করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত দিশায় কাজ করছে ত্রিপুরার বর্তমান সরকারও। আগে সমস্যা সৃষ্টির মাধ্যমে সরকারে থেকেছে তারা। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার সমস্যা নিরসনের মাধ্যমে সরকারে থাকতে চায় ও মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চায়। তিনি বলেন প্রধানমন্ত্রীর অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে সমাজের অন্তিম ব্যক্তির উন্নয়ন। বিকশিত ভারত সংকল্প যাত্রার প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন এই কর্মসূচির মাধ্যমে মানুষের কাছে সরকারের ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্পের সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যে সেই অভিযানের অংশ হিসেবে রাজ্যেও ১৬টি প্রচার গাড়ি এসেছে। রাজ্যের গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে ভিলেজ কমিটি, নগর পঞ্চায়েত সহ সব জায়গাতে গিয়ে জনমুখী প্রকল্পের সুযোগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করবে এই প্রচার গাড়িগুলি।
উত্তর জেলার উন্নয়নে বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা বলেন, ধর্মনগরে সরকারের অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। নতুন ডিএম অফিসের কাজ চলছে। হাফলং কুর্তিতে নতুন এসডিএম অফিসের কাজ চলছে। মুখ্যমন্ত্রী চা শ্রমিক কল্যাণ প্রকল্পে জমির পাট্টা প্রদানের প্রক্রিয়া জারি রয়েছে। ক্যান্সার হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য ১৫ একর জমি বন্দোবস্ত করা হয়েছে। আর্যভট্ট বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ২৫ একর জমি দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন খুব শীঘ্রই ধর্মনগরে ট্রমা কেয়ার সেন্টার চালু করা হবে। আমবাসার মতো ধর্মনগরেও কার্ডিয়াক কেয়ার সেন্টার স্থাপন করা হবে। এছাড়া চাইল্ড কেয়ার হাসপাতাল গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি আরো বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এর পাশাপাশি দলীয় কার্যকর্তাদের উদ্দেশ্যে মানুষের সঙ্গে আরো নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। মানুষের দৈনন্দিন সমস্যা নিরসনের জন্য পাশে থাকার বার্তা দেন তিনি।
সভায় উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, দলের সহ সভাপতি তাপস ভট্টাচার্য, বিধানসভার অধ্যক্ষ বিশ্ববন্ধু সেন, প্রাক্তন বিধায়িকা তথা দলের উত্তর জেলা সভানেত্রী মলিনা দেবনাথ, উত্তর ত্রিপুরা জিলা পরিষদের সভাধিপতি ভবতোষ দাস, ধর্মনগর পুর পরিষদের চেয়ারপার্সন প্রদ্যুৎ দে সরকার সহ দলের অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব।