আগরতলা : জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধা সমাজের অন্তিম ব্যক্তির কাছে স্বচ্ছতার সঙ্গে পৌঁছে দেওয়াই হচ্ছে সুশাসনের লক্ষ্য। সুশাসনের সাথে সাথে জনগণের সাথে প্রশাসনের সুসম্পর্ক তৈরি হয়। সুশাসন ও সরকারের সাথে মানুষের সুসম্পর্ক স্থাপনের লক্ষ্যে বর্তমান সরকার কাজ করছে। সোমবার ড. শ্যামাপ্রসাদ সরণীতে ত্রিপুরা ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফরমেশন কার্যালয়ের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিবস উপলক্ষে সুশাসন দিবসও উদযাপন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী রতনলাল নাথ, অর্থ ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়, যুব বিষয়ক ও ক্রীড়ামন্ত্রী টিংকু রায়, মুখ্যসচিব জে কে সিনহা, তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী, ত্রিপুরা ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফরমেশনের সিইও কিরণ গিত্যে প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য অতিথিগণ প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরা ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফরমেশন কার্যালয়ে মিডিয়া মনিটরিং সেল, চিফ মিনিস্টার্স ওয়ার রুম, প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন ইউনিটের উদ্বোধন করেন। তাছাড়া সিএম ড্যাশবোর্ড ও প্রবাসী ত্রিপুরাবাসী পোর্টালেরও উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা বলেন, ত্রিপুরা দেশের মধ্যে পঞ্চম রাজ্য যেখানে ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফরমেশন চালু করা হচ্ছে। এর আগে ১৭টি রাজ্যে এই ধরনের ইনস্টিটিউশন স্থাপন করা হলেও এখন মাত্র ৪টি রাজ্যে চালু রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হেল্পলাইন ১৯০৫ সহ আরও কয়েকটি বিষয় এখন থেকে ত্রিপুরা ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফরমেশন থেকে মনিটরিং করা হবে। ফলে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছাচ্ছে কিনা তা সহজেই তদারকি করা সম্ভব হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই জনগণের প্রতি সমর্পণের ভাবনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর মার্গদর্শনে রাজ্য সরকারও স্বচ্ছতার সঙ্গে জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি রূপায়ণ করছে। স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে রাজ্যে ই-ক্যাবিনেট, ই-বিধানসভা সহ সরকারি প্রতিটি দপ্তরে ই-অফিস চালু করা হয়েছে। শুধু তাই নয় রাজ্যের ২৩টি মহকুমা ও ৫৮টি ব্লক অফিসেও ই-অফিস চালু করা সম্ভব হয়েছে। আগামীদিনে রাজ্যের প্রতিটি ভিলেজ ও গ্রাম পঞ্চায়েত অফিসেও ই-অফিস চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী সমাজের অন্তিম ব্যক্তির নিকট সুশাসন পৌঁছানোর যে চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ করে গেছেন তা অনুসরণ করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। রাজ্য সরকার সমাজের অন্তিম ব্যক্তির নিকট সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে গত বছর থেকে প্রতি ঘরে সুশাসন অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যে জাতি জনজাতির মিশ্র সংস্কৃতি রয়েছে। সকল জনগোষ্ঠীই একে অপরের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করছে। আগামীদিনে জাতি জনজাতি মিলেমিশেই এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা গঠন করবে বলে মুখ্যমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব জে কে সিনহা বলেন, সম্প্রতি নীতি আয়োগের প্রতিনিধিদল রাজ্য সফরে এসে ত্রিপুরার অগ্রগতির বিষয়ে প্রশংসা করে গেছেন। ইতিবাচক চিন্তাভাবনা নিয়ে কাজ করার ফলেই রাজ্য আজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের সচিব ড. প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ২০১৪ সাল থেকে প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর দেশের প্রয়াত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর জন্মদিনটিকে দেশব্যাপী সুশাসন দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। প্রতি ঘরে সুশাসন ২.০ অভিযানে এখন পর্যন্ত রাজ্যের ৩ লক্ষ ১৫ হাজার সুবিধাভোগী বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। অনুষ্ঠানে এছাড়াও বক্তব্য রাখেন ত্রিপুরা ইনস্টিটিউশন ফর ট্রান্সফরমেশনের সিইও কিরণ গিত্যে। অনুষ্ঠান মঞ্চে গুড গভর্নেন্স দপ্তর, পরিকল্পনা ও সমন্বয় দপ্তর এবং অর্থনীতি ও পরিসংখ্যান দপ্তরের ৩টি পুস্তিকার আবরণ উন্মোচন করেন মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠান শেষে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা সহ অন্যান্য অতিথিগণ পতাকা নেড়ে ৫টি ভ্রাম্যমান কমন সার্ভিস সেন্টার গাড়ির যাত্রার সূচনা করেন।