আগরতলা : কর্মচারীদের ট্রান্সফার পলিসির জন্য চিন্তাভাবনা করছে রাজ্য সরকার। কারোর কোন বিশেষ অসুবিধা থাকলে সেটা নিশ্চয় দেখা হবে। বর্তমান সরকার সবক্ষেত্রেই স্পষ্টতা ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে।
আজ সিপাহীজলা জেলার মধুপুর উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবনির্মিত ভবনের উদ্বোধন করে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী তথা শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, রাজ্যের সব জায়গার উন্নয়ন করার লক্ষ্যে কাজ করছে ত্রিপুরা সরকার। আমাদের যশস্বী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জোর দিয়ে বলছেন যে উন্নয়ন ছাড়া কিছু হবে না। মানুষের সার্বিক উন্নয়ন প্রয়োজন। স্বাধীনতার পর দেখা গেছে দেশের কোন জায়গায় সেভাবে উন্নয়ন হয়নি। আর ২০১৪ সালে দায়িত্ব নিয়ে ভারতবর্ষকে একটা উন্নত জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। তিনি জোর দিয়ে বলছেন দেশের শেষ প্রান্তে যারা এখনো উন্নয়নের ছোঁয়া দেখে নি তাদের কাছে উন্নয়ন পৌঁছে দিতে হবে। যখন অন্তিম ব্যক্তি পর্যন্ত উন্নয়ন পৌঁছে যাবে এবং জীবন মানের উন্নতি হবে তখন রাজ্য ও দেশ উন্নত হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা আমাদের একটা বিশেষ অগ্রাধিকারের ক্ষেত্র। রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার এজন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। আজ শুধু মধুপুরে নতুন স্কুল ভবন উদ্বোধন হচ্ছে সেটা নয়, প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গায় পরিকাঠামো উন্নয়ন করা হচ্ছে। ছাত্রছাত্রীদের অধিক সুযোগ সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষণ প্রণালীর উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা হচ্ছে মাটির পুতুল। তাদের যেভাবে গড়ে তোলা হবে সেভাবেই তারা গড়ে উঠবে। সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের গুণগতমান বৃদ্ধি করার জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। টেট এর মাধ্যমে ভালো শিক্ষকদের স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্কুলে নতুন নতুন সুযোগ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল ইন্ডিয়া ও ডিজিটাল ত্রিপুরা এর লক্ষ্যে স্কুলগুলিতে স্মার্ট ক্লাশ, আইসিটি ল্যাব, থিঙ্কারিং ল্যাব চালু করা হয়েছে। স্কুলগুলিতে যেসব ঘাটতি রয়েছে সেগুলি পূরণ করা হচ্ছে এবং আগামীতেও করা হবে। বিদ্যাজ্যোতি স্কুলগুলিতে গত বছরের তুলনায় ফলাফল অনেক ভালো হয়েছে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, এখন টিবিএসই, সিবিএসই সহ বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষায় ভালো ফলাফল হচ্ছে। তবে শুধু পড়াশুনা নয়, ছেলেমেয়েদের চরিত্র গঠনের দিকটাও দেখতে হবে। ছোটবেলা থেকেই তাদের বিভিন্ন সামাজিক কাজে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। দেশের মহান ব্যক্তিদের জীবন সম্পর্কে অবগত করতে হবে তাদের। ভালো মানুষ হওয়ার চিন্তাধারা তাদেরকে দিতে হবে। কারণ ছোট থেকেই ভিত মজবুত করলে তাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবে। সম্প্রতি দেশের তৃতীয় রাজ্য হিসেবে ত্রিপুরা পূর্ণ সাক্ষর রাজ্যের মর্যাদা পেয়েছে। মোট ৯৫.৬% সাক্ষরতা নিয়ে এই মর্যাদা অর্জন করেছে ত্রিপুরা। যা আমাদের জন্য খুবই গর্বের ও আনন্দের বিষয়।
তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, নবম শ্রেণীর ছাত্রীদের বিনামূল্যে বাই সাইকেল প্রদানের ব্যবস্থা করেছে আমাদের সরকার। উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ কৃতি ১৪০ জন ছাত্রীকে বিনামূল্যে স্কুটি দেওয়া হয়েছে। এতে তারা আরো উৎসাহিত হবে। ২০২৪ – ২৫ অর্থবর্ষে শিক্ষা দপ্তরের উদ্যোগে নতুন স্কুল ভবন নির্মাণে ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। ২০২৪ – ২৫ অর্থবর্ষে আরো ৩৪৬টি স্কুলে পরিকাঠামো উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য ব্যয় করা হয়েছে ৮০.৮৭ কোটি টাকা। ২০২৫ – ২৬ অর্থবর্ষে ৩০টি স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণের জন্য ব্যয় করা হবে ২৬৪ কোটি টাকা। গত মে মাসে রাজ্যে আরো ৫টি স্কুলে নতুন ভবন নির্মাণ ও পরিকাঠামো উন্নয়নে ৮.৬৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিধায়ক অন্তরা সরকার দেব, সিপাহীজলা জিলা সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, বিশালগড় পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারপার্সন আতুসি দাস, শিক্ষা অধিকর্তা এন সি শর্মা, জেলাশাসক ড. সিদ্ধার্থ শিব জয়সওয়াল, পুলিশ সুপার বিজয় দেববর্মা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ। এর পাশাপাশি এই অনুষ্ঠানে পূর্ব গকুলনগর আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দিরের ন্যাশনাল কোয়ালিটি অফ ইন্সুরেন্স সার্টিফিকেট বিতরণ এবং অঙ্গনওয়াড়ি ও আশা কর্মীদের সম্বর্ধনা প্রদান করা হয়।