আগরতলা : ভারতীয় জনতা পার্টির কার্যকর্তারা সবসময় মানুষের সেবায় নিয়োজিত থাকেন। সারা বছরের ৩৬৫ দিনই মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ণের জন্য কাজ করেন তারা। নির্বাচন কমিশনের ভোট ঘোষণার অনেক আগে থেকেই ভারতীয় জনতা পার্টির সৈনিকরা কাজ করে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার তেলিয়ামুড়ার চিত্রাঙ্গদা কলাক্ষেত্রে অনুষ্ঠিত ভারতীয় জনতা পার্টির ২৮ তেলিয়ামুড়া মন্ডলের পৃষ্ঠাপ্রমুখ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৯ এপ্রিল পশ্চিম ত্রিপুরা ও আগামী ২৬ এপ্রিল পূর্ব ত্রিপুরা লোকসভা আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর একে সামনে রেখে ভারতীয় জনতা পার্টি অনেক আগে থেকেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবারের কার্যকারিনী বৈঠকে আসন্ন ভোটে ভারতীয় জনতা পার্টির আসন সংখ্যা ৩৭০ টার্গেট করে দিয়েছেন। যে আসন সংখ্যা ছিল ৩০৩। কেন তিনি ৩৭০ বলেছেন সেটার কারণও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। জম্মু ও কাশ্মীরে ৩৭০ ধারাকে অবলুপ্ত করার প্রেক্ষাপটকে সম্মান জানিয়ে এই সংখ্যা নিরূপন করে দিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি সহযোগী পার্টিদের নিয়ে এই আসন সংখ্যা ৪০০ পার করার আহ্বান রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী।
এই সম্মেলন থেকে বিকশিত ভারত, বিকশিত ত্রিপুরা, নারী শক্তির অধিকার রক্ষার জন্য, হর ঘর জলের জন্য, গরিবী কম করার জন্য, কৃষকদের উন্নতির জন্য, যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য ফের একবার কেন্দ্রে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য শ্লোগান তুলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। তিনি বলেন, আমরা সবাই ভারতীয় জনতা পার্টির এক একজন সৈনিক। আগে সারা রাজ্যে ৪২ হাজার পৃষ্ঠাপ্রমুখ ছিলেন। আর এখন সেটা বেড়ে হয়েছে ৬৬ হাজার। মানুষের জন্য পৃষ্ঠাপ্রমুখদের অনেক দায়দায়িত্ব রয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে মানুষের সঙ্গে জনসম্পর্ক স্থাপনে তাদের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে হয়। কিন্তু এরমধ্যেও সরকারে না থাকার সময় যে জোশ ছিল সরকারে থেকে সেটা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তাই সেই জোশ (উদ্দীপনা) ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করতে হবে কার্যকর্তা ও পৃষ্ঠাপ্রমুখদের।
সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবসময় আমাদের উদ্বুদ্ধ করেন। আমরাও চায় যাতে আপনারা সকলে আরো নিরলসভাবে দলের জন্য, মানুষের জন্য, দেশ ও রাজ্যের জন্য কাজ করেন। প্রধানমন্ত্রী সবসময় দেশাত্মবোধের কথা বলেন। মেরি মাটি মেরি দেশ, ৭৫ সীমান্ত গ্রাম, ক্রান্তি বীরো কি নাম, হর ঘর তিরঙ্গা এর মতো দেশাত্মবোধক ভাবনাচিন্তা এনেছেন তিনি। যা আগে আমরা কখনো শুনি নি। এভাবে দেশের মানুষের মধ্যে দেশাত্মবোধের ভাবনা জাগ্রত করছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলছেন, মে চৌকিদার হু। যা কমিউনিস্ট ও কংগ্রেসের রাজনীতিতে কেউ কখনো শুনেন নি। প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য নেতৃত্বে স্বচ্ছতার মাধ্যমেই কেন্দ্রে এখন সরকার চলছে। আর সেই দিশায় মানুষের সার্বিক কল্যাণে কাজ করছে রাজ্য সরকারও। মানুষ চায় একটা স্বচ্ছ সরকার থাকুক। যে কারণে প্রধানমন্ত্রীর উপর সকল অংশের মানুষের বিশ্বাস বেড়েছে। মানুষের জন্য তিনি মন কি বাত কর্মসূচি শুরু করেছেন। এনিয়ে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। প্রধানমন্ত্রী মানুষকে স্বপ্ন দেখান। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে গ্যারান্টি দিচ্ছেন। আবার সেই গ্যারান্টির ১০০ শতাংশ বাস্তবায়নেও গ্যারান্টি দিচ্ছেন। এমন একজন সুযোগ্য ব্যক্তিত্বকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আমরা পেয়েছি। তাই আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ত্রিপুরার দুটি আসনে ভারতীয় জনতা পার্টির প্রার্থীদের বিপুল ভোটে বিজয়ী করে প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দিতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আসন্ন নির্বাচনে যতগুলি বুথ রয়েছে সবগুলিতে জয়ী হতে হবে। সেই ভাবনাচিন্তা নিয়েই দলের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ২০১৮ সালের আগে আমরা কোনদিন ভাবি নি যে এমন একটা জগদ্দল পাথরকে সরাতে পারবো। আর সেটা সম্ভব হয়েছে একমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও ভারতীয় জনতা পার্টির তদানীন্তন সভাপতি অমিত শাহের জন্য। সমর্পনের ভাবনা নিয়ে পন্ডিত দীনদয়াল জীর ভাবাদর্শে কাজ করে ভারতীয় জনতা পার্টি। এখানে কিছু পাওয়ার আশায় যদি কেউ থাকে বা পাওয়ার জন্য রাজনীতি করে তবে মূর্খের স্বর্গে বাস করে। কাজ করতে হবে দেশের জন্য। এই পার্টিতে এক একজন লিজেন্ড রয়েছেন। ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী মাত্র ৩৩ বছর বয়সে ক্যালকাটা ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ছিলেন। উনি যদি ভাবতেন আরাম আয়েশের জীবন কাটাবেন তবে সেটা করতে পারতেন। জম্মু ও কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা নিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তিনি। একই দেশে এক নিশান, এক বিধান, এক প্রধান থাকার দাবি তুলেছিলেন তিনি। এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে কংগ্রেস ও সিপিএমের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে জনগনকে। ভাবতেও এখন দুঃখ লাগে যে, সিপিএমের অফিস থেকে কংগ্রেসের ফ্ল্যাগ ফেস্টুন আর কংগ্রেসের অফিস থেকে সিপিএমের ফ্ল্যাগ ফেস্টুন বের হয়। তাদের সময়কালে রাজ্যে সন্ত্রাসের পরিবেশ কায়েম করে রেখেছিল। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টি প্রকৃত অর্থে মানুষের সঙ্গে পাশে থেকে তাদের কল্যাণে কাজ করতে চায়। ২০২৩ বিধানসভা নির্বাচনের সময়ে কি শান্তিপূর্নভাবে ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে মানুষ সেটা দেখেছে। সেই সঙ্গে এদিন আরো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির প্রদেশ সভাপতি রাজীব ভট্টাচার্য, আসাম ও ত্রিপুরার সংগঠন মহামন্ত্রী রবীন্দ্র রাজু, প্রদেশ সহ সভাপতি সুবল ভৌমিক, প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক অমিত রক্ষিত, বিধানসভার মুখ্য সচেতক তথা বিধায়ক কল্যাণী রায়, মন্ডল সভাপতি রঞ্জিত সূত্রধর সহ জেলা ও মন্ডল স্তরের অন্যান্য নেতৃত্ব।