আগরতলা : রাজ্যে বিগত দিনের তথা গত বছরের ভয়াবহ বন্যা থেকে আমাদের অভিজ্ঞতা নিতে হবে। সবার মনে রাখতে হবে মানুষকে উদ্ধার করা তথা বিপর্যয়ের মুহূর্তে তাদের পাশে দাঁড়ানো শুধুমাত্র সরকারি কাজ নয়, এটা আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা।
আজ সচিবালয়ে ২ নং কনফারেন্স হলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে আগাম বর্ষাকালীন প্রস্তুতি বিষয়ে রাজ্যভিত্তিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা উপস্থিত বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে একথা বলেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিপর্যয়ের মুহূর্তে তথা প্রতিকূলতা থেকে বেরিয়ে আসতে দপ্তরগুলিকে সমন্বয় সাধনের উপর জোর দিতে হবে। বিগত দিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে এবং কোথায় কোথায় গ্যাপ রয়েছে সেগুলিকে চিহ্নিত করতে হবে। তবেই বিপর্যয়ের সময় নাগরিক সমাজকে সঠিক পরিষেবা প্রদান করা সম্ভব হবে। এক্ষেত্রে সমাজের বিভিন্ন ক্লাবগুলিকেও এগিয়ে আসার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি সরকারি আধিকারিক তথা জেলাশাসকদের পরামর্শ দেন ক্লাবগুলির সাথে যোগাযোগ রক্ষার করে চলার। মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসকদের উদ্দেশ্যে বলেন, জনগণকে আগের থেকে সচেতন করা প্রয়োজন যাতে তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, বই, দলিল, টাকা পয়সা নিরাপদ স্থানে রাখেন।
এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী হাসপাতালগুলিতে প্রয়োজনীয় ওষুধ, অ্যান্টিভেনম ইনজেকশন, ব্লিচিং পাউডার, হ্যালোজেন পাউডার ইত্যাদি সঠিক পরিমাণে মজুত রাখার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। রিলিফ ক্যাম্পগুলিতে আসার পর নাগরিকদের সম্পত্তি রক্ষার বিষয়েও জোর দিতে হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। প্রয়োজনে ড্রোন নজরদারির কথা ভাবা প্রয়োজন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিপর্যয়ের সময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা একটি সাধারণ বিষয়। তাই হ্যাম (HAM) রেডিও আরও বেশি পরিমাণে প্রদান করার উপর তিনি গুরুত্ব আরোপ করেন। বিভিন্ন বাঁধের সুইচ গেইটগুলি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সেদিকেও নজর দিতে হবে। ফুট ব্রিজগুলি মেরামত এবং চালু রাখার উপর মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব আরোপ করেন।
সভায় মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বিপর্যয়ের পূর্বেই মেডিক্যাল টিম গঠন করে রাখতে হবে। এতে প্রতিকূল সময়ে দ্রুততার সঙ্গে টিম পাঠানো সম্ভব হয়। মুখ্যমন্ত্রী জেলাশাসকদের কাছ থেকে রাজ্যের বাঁধগুলির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবগত হন। তিনি প্রতিদিন বাঁধগুলির উপর নজরদারি রাখার উপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, মানুষের পাশাপাশি পশুপাখিদের নিরাপত্তা এবং উদ্ধারের বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, বিপর্যয়ের সময় পরিশ্রুত পানীয়জল দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাই জনগণকে পরিশ্রুত পানীয়জল প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি শেল্টার হাউসগুলিতে সঠিক পরিমাণে খাদ্য, পানীয়জল চিকিৎসা এবং বিদ্যুৎ পরিষেবা অব্যাহত রাখার উপর জোর দিতে হবে। তিনি জেলাশাসকদের বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলি আগের থেকে চিহ্নিত করতে হবে। সেসব স্থানের নিকটবর্তী শেল্টার হাউস স্থাপন করা যায় সে সম্পর্কে আগাম প্রস্তুতি নিতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট স্থানের জনগণকে বিপর্যয় মুহূর্তে সরকারের পাশে দাঁড়ানো এবং সহযোগিতা করার বিষয়ে আগাম সচেতন করে তোলা প্রয়োজন রয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী সচেতনতা শিবির গড়ে তোলার বিষয়ে পরামর্শ দেন। বিপর্যয়ের সময় নিকটবর্তী সংশ্লিষ্ট থানাগুলিকে আরও বেশি সজাগ থাকার পরামর্শ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বিপর্যয়ে ক্ষতির পরিমাণ নিরীক্ষণের কাজটিও দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে হবে। তিনি বলেন, প্রতিকূল সময়ের থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের সর্বদা তৈরি থাকতে হবে।
বৈঠকে মুখ্যসচিব জে. কে. সিনহা বলেন, বিগত দিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলিকে সজাগ থাকতে হবে। হেল্প লাইন সেন্টারগুলিকে পুরোদমে সক্রিয় থাকতে হবে। জেলাশাসকদের মনিটরিং-এর উপর জোর দিতে হবে। ফুড প্যাকেট প্রদান, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, বাঁধগুলির অবস্থা, স্বাস্থ্য পরিষেবা, উদ্ধারকার্য সবদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
আজকের বৈঠকের শুরুতে প্রথমেই রাজস্ব দপ্তরের সচিব ব্রিজেশ পান্ডে সহ বিদ্যুৎ, পূর্ত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিপর্যয় মোকাবিলা, খাদ্য, বন, পঞ্চায়েত, সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা, কৃষি, নগরোন্নয়ন ইত্যাদি দপ্তরের সচিবগণ তাদের দপ্তরের ভূমিকা সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেন।
এছাড়াও বৈঠকে পুলিশের মহানির্দেশক অনুরাগ সহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত জেলাশাসক ও সমাহর্তাগণ তাদের বর্ষাকালীন প্রস্তুতি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরেন।