আগরতলা : দুর্ঘটনা রোধে গাড়ি চালানোর সময়ে অবশ্যই সিট বেল্ট বেঁধে রাখতে হবে। অন্যথায় আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গাড়ি চালানোর সময় সিট বেল্ট এবং বাইক, স্কুটি চালানোর সময়ে হেলমেট পরিধানের বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে ট্রাফিক দপ্তরকে। সেই সঙ্গে পুলিশকে ভয় পেতে হেলমেট নয়, নিজেকে বাঁচানোর জন্য হেলমেট পরিধান করবেন।
রবিবার আগরতলার স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে পরিবহন দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এই কঠোর বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
এদিন পরিবহণ দপ্তরের উদ্যোগে রাজ্যে সড়ক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে ১৬টি যানবাহন বিতরণ, সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য সংক্রান্ত পুস্তিকা প্রকাশ, সাধারণ ট্রাফিক বিধি/নির্দেশিকা সংক্রান্ত পুস্তিকা প্রকাশ, রাজ্য সরকারের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের মধ্যে হেলমেট বিতরণ এবং জিরানিয়াস্থিত ইনস্টিটিউট অফ ড্রাইভিং ট্রেনিং এন্ড রিসার্চ (আইডিটিআর) এ (৩০ দিন মেয়াদী) মহিলাদের জন্য ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা মোকাবিলা করার জন্য সকলের মধ্যে মানবিক বোধ জাগ্রত হতে হবে। অনেক সময় এধরণের ঘটনার মুখোমুখি হলেও কাজের অজুহাতে আমরা এড়িয়ে যায়। কিন্তু দুর্ঘটনার পরবর্তীতে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে দিলে প্রাথমিক চিকিৎসার সুযোগটুকু হয়ে থাকে। তাই মানবিক বোধ সবার আসা উচিত। এজন্য গণ জাগরণ হওয়া দরকার। সম্প্রতি ত্রিপুরার মানুষ বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছেন। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সবাই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ত্রিপুরা সরকারও সাধ্যমতো চেষ্টা করছে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, মানবিকতা বোধ নিয়ে কোথাও কোন দুর্ঘটনা হলে সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সেই সময় অনেকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। আবার অনেকে পাশ কাটিয়ে চলে যান। পরিসংখ্যান দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, সারা দেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত দেড় লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়। দুর্ঘটনায় ৫ লক্ষ লোক পঙ্গু হয়ে যান। প্রতি বছর যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে। দুর্ঘটনা রোধে আমাদের প্রত্যেককে সচেতন থাকতে হবে। আমি নিজেও বহুদিন গাড়ি চালিয়েছি। মনে রাখতে হবে যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সতর্কতার সঙ্গে যানবাহন চালালে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। দুর্ঘটনা রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর যেমন ট্রাফিক, পরিবহণ, পূর্ত, স্বাস্থ্য দপ্তর একসাথে কাজ করছে। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় গাড়ি চালালে দুর্ঘটনার প্রবণতা অত্যধিক থাকে। এজন্য সচেতনতার বার্তা দিতে হবে। ট্রাফিকের নিয়ম কানুন অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যেখানে সেখানে যানবাহন পার্কিংয়ের কারণেও দুর্ঘটনার প্রবনতা থাকে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, ত্রিপুরায় এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রিকৃত যানবাহনের সংখ্যা ৭,৮৭,২০৩টি। এরমধ্যে টু হুইলারের সংখ্যা ৫,৫৬’০০০টি। সবচেয়ে বেশি রয়েছে টু হুইলার যানবাহন। গত ৬ বছরে ত্রিপুরায় ৩,৩০৭টি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। এসকল ঘটনায় ১,৩৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন ৩,৭২৪ জন। অনেক সময় দেখা যায় বাইক বা স্কুটি চালানোর সময়ে অনেকে হেলমেট পরিধান করেন না এবং হেলমেটের সাইডে মোবাইল ঢুকিয়ে কথা বলতে বলতে যাচ্ছেন। তাই সতর্ক হতে হবে। ২০১৪ সালের ১২ এপ্রিল সুপ্রীমকোর্ট সড়ক সুরক্ষার উপরে একটি কমিটি গঠন করেছে। সুপ্রীমকোর্ট কমিটি অন রোড সেফটি (SCCORS) নামে এটিকে আমরা জানি। ত্রিপুরাতেও রাজ্য স্তরে স্টেট রোড সেফটি কাউন্সিল গঠন করা হয়েছে। তাছাড়া স্টেট রোড সেফটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি একটি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে গাড়ি চালানোর সময়ে অবশ্যই সিট বেল্ট বাঁধতে হবে। কিন্তু খুব কম মানুষই গাড়ি চালানোর সময়ে সিট বেল্ট পরিধান করেন। তাই আমি ট্রাফিক দপ্তরের উদ্দেশ্যে আহ্বান রাখছি যাতে কঠোরভাবে এই বিষয়টি নজর রাখা হয়। পুলিশকে ভয় পাওয়ার জন্য হেলমেট নয়। নিজেকে বাঁচানোর জন্য হেলমেট পরিধান করবেন। হেলমেট থাকলে অনেক জীবন রক্ষা হয়। যুব সমাজের কাছে হেলমেট পরিধান করার বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। এর পাশাপাশি নির্দেশিকায় রয়েছে জাতীয় সড়ক থেকে ১০০ মিটার দূরে বিলেতি মদ (ফরেন লিকার) দোকান হতে হবে। এক্ষেত্রে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নজর দিতে হবে। পরিবহন ও ট্রাফিক দপ্তরকেও এবিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। এর পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট আমাদের কাছে নিয়ে আসতে হবে। আইন অন্যান্য করে কেউ যদি ১০০ মিটারের মধ্যে ফরেন লিকার শপ খুলে থাকে তবে সেগুলি সরানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দুর্ঘটনার গোল্ডেন আওয়ার অর্থাৎ ১ ঘন্টা (৬০ মিনিট) এর মধ্যে যদি আহতকে হাসপাতালে পৌঁছানো যায় তবে তাকে বাচাঁনো সম্ভব হয়। এজন্য উদ্ধারকারী ব্যক্তিকে ৫ হাজার টাকা পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে আরো বেশি করে মনিটরিং করতে হবে। এতে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবহন দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী, আগরতলা পুর নিগমের মেয়র তথা বিধায়ক দীপক মজুমদার, রাজ্য পুলিশের মহানির্দেশক অমিতাভ রঞ্জন, পুলিশের মহানির্দেশক (গোয়েন্দা) অনুরাগ, ধ্যানকর, পরিবহন দপ্তরের সচিব সি.কে. জমাতিয়া, পরিবহন কমিশনার সুব্রত চৌধুরী সহ অন্যান্য আধিকারিকগণ। এছাড়া এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন পুলিশ ও ট্রাফিক দপ্তরের কর্মীগণ। পাশাপাশি অনুষ্ঠানে পরিবহন দপ্তরের সকল কর্মীদের পক্ষ থেকে বন্যাদুর্গতদের জন্য ১,৭৩,৩৫০ টাকা অর্থরাশি মুখ্যমন্ত্রী ত্রান তহবিলে প্রদান করা হয়। এজন্য তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী।