আগরতলা : এইচআইভি/ এইডস মোকাবিলায় আরো স্ক্রিনিং বৃদ্ধি করতে হবে। এসব বিষয়ে সচেতনতার জন্য স্কুল কলেজে আরো আলোচনার দরকার। এনিয়ে আরো জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ড্রাগসের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থান নিয়ে কাজ করছে নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি।
আজ আগরতলার এমবিবি মাঠে রাজ্যভিত্তিক এইডস দিবস উদযাপন এবং উত্তর, গোমতী ও ধলাই জেলায় ক্যান্সার কেয়ার সেন্টারের ভার্চুয়াল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর ক্যালেন্ডার অনুসারে প্রায় ৮টি দিবস পালন করা হয়। এরমধ্যে অন্যতম একটি এইডস দিবস। অন্যান্য দিবসের মধ্যে রয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস, বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস, বিশ্ব টিকা দিবস, বিশ্ব তামাক দিবস, বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস, বিশ্ব হেপাটাইটিস দিবস।
আলোচনায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরা রাজ্য এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি নিয়মিতভাবে এইডসের বিরুদ্ধে কাজ করছে। আমরা সবাই জানি শরীরে একবার এইচআইভি সংক্রমণ হলে সেটা নির্মূল করার কোন উপায় নেই, ঔষধ নেই। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভাইরাল লোড কমিয়ে রাখা যায়। এতে যিনি আক্রান্ত হয়েছেন তিনি স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন। এইডস সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কাজ করছে ত্রিপুরা এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি। তাদের সার্বিক কাজের নিরিখে জাতীয় এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির জাতীয় স্তরের পর্যালোচনায় ত্রিপুরা গুড পারফর্মিং স্টেট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে এবং পুরস্কৃত হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ সাহা জানান, সারা বিশ্বে এইচআইভি সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় চার কোটি। এরমধ্যে ভারতে এই সংখ্যা প্রায় ২৫.৪৪ লাখ। এইচআইভি সংক্রমণ নিয়ে সচেতনতা করার জন্য আজকের এই কার্যক্রমের আয়োজন। এরআগেও আমরা এনিয়ে একাধিকবার নানা কার্যক্রম করেছি। আগে রেড রিবন ক্লাব শুধু কলেজ স্তরে ছিল। এজন্য আমি স্কুল স্তরে রেড রিবন ক্লাব করার জন্য এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির কাছে আহ্বান রাখি।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেন, ভোগবাদের দুনিয়ায় মানসিক ব্যাধি ইত্যাদির কারণে যুব সমাজ এখন নেশার দিকে প্রভাবিত হচ্ছে। ড্রাগসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে কাজ করছে সরকারের বিভিন্ন নিরাপত্তা এজেন্সিগুলি। কিছুদিন আগে প্রচুর পরিমাণে নেশাদ্রব্য ধ্বংস করা হয়েছে। ড্রাগস মোকাবিলায় শুধু ধরপাকড়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে ড্রাগসের শিকার সেসব ছেলেমেয়েদের সতর্ক করাও প্রয়োজন। এই দিশায় কাজ করছে সরকার। তথ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আমাদের মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮৩%। যারা যুব গোষ্ঠী। এরমধ্যে ৩৯% রয়েছে মেয়েরা।
অনুষ্ঠানে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ক্লাশে কোন ধরণের উশৃঙ্খল ছেলেমেয়ে থাকলে তাদের প্রতি নজর রাখতে হবে। সেই সঙ্গে ক্লাশে কারোর অনুপস্থিতির দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে অভিভাবকদের ডেকে এনে জিজ্ঞেস করতে হবে। এইচআইভি/ এইডস মোকাবিলায় আরো স্ক্রিনিং বৃদ্ধি করতে হবে। যত স্ক্রিনিং করা যাবে ততই চিহ্নিত করা যাবে। এসব বিষয় নিয়ে সচেতনতার জন্য স্কুল কলেজে আরো আলোচনার দরকার। শিক্ষক শিক্ষিকাদেরও ক্লাশে অন্তত ৫ মিনিট এবিষয়ে আলোচনা করা দরকার। এনিয়ে ক্লাব, সামাজিক সংস্থাগুলিকেও আরো এগিয়ে আসতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে বিশ্বে এইচআইভি/ এইডস নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক হ্রাস পেয়েছে। ভারতবর্ষেও সেটা হ্রাস পেয়েছে। এনিয়ে আরো জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন রয়েছে। ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ত্রিপুরায় মোট এইচআইভি/ এইডস আক্রান্তের সংখ্যা ৬,৪১৭ জন। এরমধ্যে মহিলা ১,২২২ জন। আর পুরুষ ৫,১৮৯ জন ও ট্রান্সজেন্ডার ৬ জন। এইচআইভি/ এইডস আক্রান্তদের ২,০০০ টাকা করে ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করেছে সরকার।
অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এমবিবি ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. বিভাস দেব, স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে, পশ্চিম জেলার জেলাশাসক বিশাল কুমার, পুলিশ সুপার নমিত পাঠক, উচ্চশিক্ষা অধিকর্তা অনিমেষ দেববর্মা, শিক্ষা অধিকর্তা এন সি শর্মা, স্বাস্থ্য দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ দেবাশ্রী দেববর্মা, পরিবার কল্যাণ ও রোগ প্রতিরোধ দপ্তরের অধিকর্তা ডাঃ অঞ্জন দাস, ত্রিপুরা রাজ্য এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির প্রজেক্ট ডিরেক্টর ডাঃ বিনীতা চাকমা, জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের এমডি সাজু ওয়াহিদ সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ।